ডুবোচর আর নাব্য সংকটে স্থবির বরিশালের নৌপথ: বন্ধ হয়ে গেছে বিভাগের অন্তত ১৫টি অভ্যন্তরীণ লঞ্চ রুট

0
65

বরিশাল ব্যুরো :

 

নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান ভরসা ছিল নৌযোগাযোগ।

এক সময় নিরাপদ, স্বল্প খরচ ও স্বস্তিদায়ক এই যাতায়াত ব্যবস্থাই ছিল বরিশাল বিভাগের প্রধান অবলম্বন। কিন্তু নদ-নদীতে ক্রমবর্ধমান ডুবোচর, ভয়াবহ নাব্য সংকট ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে সেই নৌপথ আজ বিলুপ্তির পথে।

ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের অন্তত ১৫টি অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

যেগুলো এখনো চালু রয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও নড়বড়ে। যাত্রী সংকট ও অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়ের চাপে সেসব রুটও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

 

এক দশক আগেও বরিশাল থেকে বরগুনা, গলাচিপা, পাথরঘাটা, কালাইয়া, চরদুয়ানী, তুষখালী, মুলাদী, বাহেরচর, বোরহানউদ্দিন, ভাষানচর-হিজলা ও মহিপুরসহ বহু রুটে নিয়মিত শতাধিক লঞ্চ চলাচল করত। বর্তমানে সেখানে সচল রয়েছে মাত্র চারটি রুট। তাও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। এখন বরিশাল-ভোলা, মজুচৌধুরীর হাট ও লক্ষ্মীপুর রুটে মাত্র ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে।

 

শীত মৌসুম এলেই মেঘনা, কীর্তনখোলা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ডুবোচর। চলতি মৌসুমে কাটাখালি থেকে রহমতখালি পর্যন্ত নৌপথে নাব্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। একাধিকবার মাঝনদীতে লঞ্চ আটকে পড়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

লঞ্চ শ্রমিকরা জানান, অনেক সময় ২ ঘণ্টা ঘুরপথে বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করতে হয়। এতে সময়ের পাশাপাশি জ্বালানি খরচও বাড়ছে। ফলে নাব্য সংকট, যাত্রীস্বল্পতা ও বাড়তি ব্যয়ের চাপে অনেক লঞ্চ মালিক লঞ্চ বিক্রি করে দিচ্ছেন বা বন্ধ রেখেছেন।

 

এদিকে নৌপথ সচল রাখতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযোগ রয়েছে, ড্রেজিং কার্যক্রম পরিকল্পনাহীন ও খণ্ড খণ্ডভাবে হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা বরিশালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদুজ্জামান বলেন,

‘প্রতি বছর ড্রেজিং হয় ঠিকই, কিন্তু যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে কাজ হয় না। পলি জমে আবার নৌপথ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, বরিশালের একতলা লঞ্চঘাট, বুখাইনগর নালা, নদীবন্দর, হিজলার মৌলভীরহাট, মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট, মুলাদীর নয়াভাঙ্গলী নদী ও চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া খালে ড্রেজিং চলছে বা শেষের পথে।

 

ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-উর-রশীদ বলেন, নদীতে অতিরিক্ত পলি জমার কারণে নাব্য সংকট বাড়ছে। বরাদ্দ অনুযায়ী ড্রেজিং চলছে এবং ভবিষ্যতে নৌপথ সচল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক ড্রেজিং ছাড়া বরিশালের ঐতিহ্যবাহী নৌযোগাযোগ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নিলে অচিরেই দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথ ইতিহাসে পরিণত হবে।

এই বাংলা/এমএস

টপিক 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here