::: নাদিরা শিমু :::
আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারাই দলটির বিপদ সংকটর সম্পদ হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। এমন ত্যাগী নেতাদের অবহেলা ও অমর্যাদার কারণেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা টানাপোড়েন পড়েছে দলটি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, কালুঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হায়াৎ খান, এমনই এক ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা। দেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, কালুরঘাটে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ – সবখানেই জড়িয়ে আছে সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান সেকান্দার হায়াত খানের স্মৃতিচিহৃ।
মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল অনুযায়ী, ‘ আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ চালু করলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ কিংবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে কালুরঘাটে বেতার চালু হওয়ার শুরু থেকে এর সঙ্গে সামগ্রিকভাবে জড়িত ছিলেন কালুরঘাট সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সেকান্দর হায়াত খান। সেকান্দর হায়াত খান ও তাঁর ভাই হারুন-অর-রশিদ খানের নেতৃত্বে বেতারকেন্দ্রের আশপাশের লোকজন বেতারকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। ‘
বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান তাঁর ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেকান্দর হায়াত খানের বিস্মৃত স্মৃতি থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন।
সমসাময়িকদের ভাষ্যমতে, যখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চরম দুঃসময় চলছিলো, তখন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হায়াৎ খান।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগদানের আগ মুহুর্তে, নেত্রীর গাড়ি বহর নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিও’র সামনে আসে। তখন আচমকা গর্জে উঠে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে ২৪ জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আহত হন আরো দু’শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের সময় মানববেষ্টনী তৈরি করে শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হায়াৎ খানসহ অসংখ্য নেতা কর্মী।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতে, ‘ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাইব্রিড আর বসন্তের কোকিলদের জয় জয়কার চলছ। ,আর এরমাঝেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ত্যাগী নেতাদের আত্মত্যাগের কথা। ‘
সেকান্দর হায়াত খান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে মোহরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিস্তৃত সংগঠন। সেই পথ ধরেই এগুতে চান সেকান্দর হায়াত খানের ছেলেও। বোয়ালখালী চান্দগাঁও আসনে আওয়ামী লীগ থেকে উপ নির্বাচনে মনোনয়ন চান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর হায়াত খানের ছেলে আশেক রসূল খান। তার মা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস খানও এলাকার উন্নয়ন ও সেকান্দর হায়াত খাতের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। জানা যায়, আশেক রসূল খান আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
জানতে চাইলে আশেক রসূল খান বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়ন কর্মসূচির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বাবার আদর্শের পথ ধরে এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে প্রয়াত সেকান্দর হায়াত খানের ছেলে হিসেবে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে আরো সুসংহত করবো।
এইবাংলা/হিমেল