নিজস্ব প্রতিবেদক:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। সোমবার (৪ আগস্ট) বিচারপতি গোলাম মুর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি এই সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্যে ইমরান বলেন, “২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর বিজয়নগরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতে গুলি চালায়। আমি বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হই এবং দুইজন সহযোদ্ধা নিহত হন।”
তিনি জানান, “চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হলেও কেউ ভর্তি নেয়নি। পরে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও পরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আমাকে দেখতে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত ইমরান বলেন, “শেখ হাসিনা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি নিশ্চিত পুলিশ গুলি করেছে?’ আমি বলি, হ্যাঁ, তবে কারা করেছে তা চিনি না। যাওয়ার সময় তিনি ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ বলে নির্দেশ দিয়ে যান, যা আমি নিজ কানে শুনেছি।”
তিনি অভিযোগ করেন, এরপর হাসপাতালে তাকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পা পচে গন্ধ ছড়ালে কেউ কাছে আসতে চাইতো না। “বাইরের ওষুধ আনার অনুমতিও ছিল না। আমার বাবা রিলিজের চেষ্টা করলেও দেওয়া হয়নি। পরে বুঝতে পারি ওই মন্তব্যের কারণেই আমাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে,” বলেন ইমরান।
সাক্ষ্যে আরও উল্লেখ করেন, “আমার বাম পায়ে ২৫টি অস্ত্রোপচার হয়েছে, কিন্তু এখনো সেটি অচল। আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজি এর জন্য দায়ী। তারাই গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
এই সাক্ষ্যের পর ইমরানকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, যিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন। মামলায় আসামি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ।
এ মামলায় এর আগে সাক্ষ্য দেন নারায়ণগঞ্জের খোকন চন্দ্র বর্মন, যিনি ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে মুখমণ্ডলে গুরুতর জখম হন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী হামলার ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।