স্বপন রবি দাশ (হবিগঞ্জ)
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের ভরগাঁও গ্রামে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ১১ নম্বর কূপ খনন প্রকল্পের আড়ালে চলছে অবৈধ পাহাড় কাটা ও জমি দখলের মহোৎসব। পরিবেশগত ছাড়পত্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই দিনের পর দিন পাহাড় কেটে রাস্তা, সমতল মাঠ এবং বসতি নির্মাণের কাজ চললেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় জনতা।
সিন্ডিকেটের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি ও ঠিকাদারি সিন্ডিকেট টিম খনন কাজের সুযোগ নিয়ে ফসলি জমি দখল ও পাহাড় কেটে নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করছে। কেউ কেউ ভয়ভীতি দেখিয়ে টিলা দখল করে ফেলেছে, কেউ আবার ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে কিছুই দেয়নি।
ভুক্তভোগী আকলু মিয়া, জিতু মিয়া ও আব্দুল কাদির জানান, তাদের রেকর্ডভুক্ত জমি জোরপূর্বক দখল করে পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে, এখন প্রতিবাদ করলেই হুমকি আসে।
দায় এড়ানোর পালা সংশ্লিষ্টদের
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পায়ারেল গ্যাস কোম্পানির নজরুল ইসলাম বলেন, কাজটি সাব-কন্ট্রাক্টে অন্যরা করেছে।
সাব-কন্ট্রাক্টর সততা কনস্ট্রাকশনের রাশেদ আহমেদ বলেন, স্থানীয়রা কাজ করছে।
এদিকে সরবরাহকারী সুশেল মিয়া বলেন, “আমরা শুধু ইট-বালু দিয়েছি, পাহাড় কাটিনি।”
আইন ভঙ্গ করে চলা এই প্রকল্পে রয়েছে বড় ঝুঁকি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রকল্পে পাহাড় কাটা বেআইনি। রিজার্ভ বন বা সংরক্ষিত এলাকায় কাজ করতে হলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়াই এই কর্মকাণ্ডে হাইকোর্টে মামলা হতে পারে, এমনকি কাজ বন্ধ করার নির্দেশও আসতে পারে।
প্রশাসনের নীরবতা ও প্রতিক্রিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় সহকারী পরিচালক জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। জেলা প্রশাসকের সাড়া না মেলায় যোগাযোগ করা হয় নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিষয়টি জানতাম না, এখন জেনেছি—তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”তবে এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
পরিবেশের জন্য বড় হুমকি: স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অবাধ পাহাড় কাটা জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ভূমিধস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে এমন কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধ না হলে ক্ষতি হবে অপূরণীয়।
তাদের দাবি—সব অনিয়মকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুক প্রশাসন।