26.3 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

অভিনব কৌশলে চট্টগ্রামে ঘাট দখলে নিলো বিএনপির দুই নেতা

আরও পড়ুন

তানভীর আহমেদ, চট্টগ্রাম 

টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার আগেই চট্টগ্রামের ফিসারীঘাট এলাকার ঘাট দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে বিএনপির দুই নেতা। সাইনবোর্ডে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্মারক নাম্বারও উল্লেখ করেছে তারা। তবে এই ঘাটটির জন্য পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় স্থানীয় বিএনপির দুই নেতার নামে টাঙ্গানো হয়েছে সাইনবোর্ড।

বিএনপির আলোচিত এই দুই নেতা হচ্ছেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছু ও মহানগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের ছবিসহ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখল করা হয়েছে চট্টগ্রামের বৃহৎ মাছ বাজারের ‘ঘাট’। দখল কৌশলে ব্যবহৃত  সাইনবোর্ডে  উল্লেখ করা হয়েছে চসিকের একটি স্মারক নম্বরও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাছবাজারের ঘাট দখলে নিয়ে অন্তত ছয় মাস চাঁদা তুলছেন বিএনপি ও যুবদলের নেতারা। সাইনবোর্ড টানানো দুই  বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাতের অনুসারী বলে জানা গেছে। সুত্রমতে, বিএনপির দুই নেতার নামে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও ঘাট দখলের নেপথ্যে  নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ ও নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশার অনুসারীরা। এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের সবাই নগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ডাঃ শাহাদাত হোসেনের ঘনিষ্ঠজন। তবে সাইনবোর্ড লাগানো দুই বিএনপি নেতা দাবি করেছেন মেয়রের মৌখিক নির্দেশেই তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে টাকা আদায় শুরু করেছেন। মেয়রের মৌখিক নির্দেশে ঘাট দখলের বৈধতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ৩.৭৫ একর জমিতে ২০১৭ সাল থেকে আধুনিক  ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার গড়ে তোলে সোনালী যান্ত্রিক মৎসজীবি সমবায় সমিতি।মাছবাজার দখলের এই ঘটনায় ঘাটের সাধারণ মৎস্যজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। দখল-বেদখলে জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন অনেকেই। 

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল দুইটি দৈনিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাদের আওতাধীন পাঁচটি ফেরি ও ফিশারি ঘাট বাংলা ১৪৩২ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করা হয় । ফেরিঘাট গুলো হচ্ছে-সল্টগোলা ঘাট, ফিশারি ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পান ঘাট থেকে গইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট ও চাক্তাই লবণ ঘাট। এসব ফেরি ঘাটের ফরম সংগ্রহ করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ এপ্রিল (আজ মঙ্গলবার)। দরপত্র দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ এপ্রিল। কিন্তু এর আগেই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দখলে নেয়া হয়েছে ফিসারীঘাট।

সরেজমিন দেখা গেছে, দুটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। একটি  ফিশারি প্রবেশের মুখে এবং আরেকটি টাঙানো হয়েছে ফিশারি ঘাটের পেছনের অংশে যেখানে মাছের ট্রলার নোঙর করে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে  বড় মাছ বাজার এটি। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইজারাকৃত। এস্টেট শাখা রাজস্ব বিভাগ। স্মারক নম্বর : ৪৬.১১.১৬০০.০০৩. ১৮.০০২.২৫। চাক্তাই ঘাট, (নতুন মাছ বাজার) চাক্তাই, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম। সাইনবোর্ডের এক পাশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছু ও অপরপাশে মহানগর বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খানের ছবি রয়েছে।

সাবেক মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ নবাব খান  বলেন, বৈষম্য বিরোধী  ছাত্র-আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর ১৫-২০ দিন পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আমাকে আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছুকে টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেন। তবে আমরা ঠিকাদার নই।

সাইনবোর্ডে ঠিকাদার উল্লেখ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ স্মারক নাম্বার উল্লেখ করা ও ঠিকাদার উল্লেখ করা আমাদের ভুল হয়েছে।’

একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন- ফিসারীঘাটের পান দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গণহারে চাঁদা আদায় করছে একটি চক্র। মাছ পরিবহনে জড়িত গাড়ি থেকেও নেয়া হয় মাসোহারা ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেরিঘাটের ইজারা নিয়ে নানা অনিয়ম চলে আসছিলো। একারণে  গত বছরও নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার দিতে পারেনি ঘাটগুলো। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির আগেই চসিক মালিকানাধীন ফেরিঘাট পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। গত বছরও রাজস্ব বিভাগ ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন ১৫১৬৩/২৩ নম্বর মামলার আদেশ মোতাবেক ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করে চসিক কর্তৃপক্ষ।

সুত্রমতে, , এটি চসিকের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কৌশল। মামলাটি হয়েছে চসিকের রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুরোনো ইজারাদারের আঁতাতের মাধ্যমে। ইজারা না দিয়ে খাসকালেকশনে রাজস্ব আদায় করা হলে চসিকের অগোচরে কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিতে পারবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী  বলেন, ‘ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পাঁচটি ফেরিঘাটে বাংলা ১৪৩২ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এসব ফেরিঘাটের ফরম সংগ্রহ করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ এপ্রিল।  দরপত্র দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ এপ্রিল। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। ঠিকাদার সেজে কেউ সাইনবোর্ড তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ করে থাকলে সেটির বৈধতা নেই। ‘

প্রসঙ্গত, ফিসারীঘাট, সদরঘাট, মাঝিরঘাটের ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিলো যুবলীগ-আওয়ামী লীগের চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসীর হাতে। ৫ই আগস্টের পর হাত বদলে যুবদল -বিএনপি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে আসে ঘাটগুলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর