এম এইচ খান: যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ১০ টার দিকে পরীক্ষামূলক একটি ট্রেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে পৌছে। সেতুটি নির্মানে প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
গতকাল সোমবার বিকেলেও ব্রডগেজ লাইনে পরীক্ষামূলক একটি ট্রেন সেতুর দুই প্রান্ত থেকে চলাচল করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলওয়ে সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
রেলওয়ে সেতুটির প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে আজও পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি চলাচল করছে।
সেতুটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। আজ পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার সময় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
পরবর্তী প্রকল্প ব্যয় আরো ৭ হাজার ৪৬.২৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয় ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা।
যার ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩। পরে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই রেলওয়ে সেতুই হবে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মেলবন্ধন। রেলসেতুটি দিয়ে আন্তদেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথেও পণ্য পরিবহন সহজতর হবে এবং খরচও সাশ্রয় হবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনবে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, সেতুটি উদ্বোধন হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেলওয়ে যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা আছে, সেটা আর থাকবে না।
সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে।