27 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

ফজলে করিমের ক্যাশিয়ার রেলের প্রধান ভূসম্পদ কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী পেলেন প্রাইজপোস্টিং 

রেল থেকে বদলি হয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী

আরও পড়ুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ থাকলেও চট্টগ্রাম রেল পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী অবশেষে পুরস্কৃত হলেন ।তিনি রাউজানের সাবেক এমপি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির মন্ত্রণালয়ল সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রেলে কর্মরত থাকাকালীন রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে বিভিন্ন জায়গা লীজ, দখল, বাতিল লীজকৃতভূমি তালা ঝুলিয়ে দেওয়া মত ঘটনা ঘটিয়েছেন।

সোমবার (২৮অক্টোবর)রেলওয়ে পূর্ব প্রধান ভূ সম্পওি কর্তা সুজন চৌধুরীক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা পরিষদ চট্টগ্রামে বদলী করে দেয়া হয়েছে প্রাইজ পোষ্টিং। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুন শিবলী স্বাক্ষরিত দাপ্তরিক চিঠিতে এআদেশ দেওয়া হয়। তারস্হলে রাঙামাটি পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড সদস্য মাহবুউল করিমকে পদায়ন করা হয়েছে।

সূএ জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দিন আগে( ৪ আগষ্ট) টাইগারপাসে সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু তার অনুসারীদের নিয়ে বিধোধী আন্দোলনকারী ছাএজনতার উপর হামলা শেষে কর্মী বাহিনী নিয়ে সিআরবি রেল ভবনে সুজন চৌধুরী দপ্তরে বসে চা নাস্তা করেন।চট্টগ্রাম রেলহতে লীজভূমিতে ফোর স্টার সিএনজি ষ্টেশনে(সিআরবি সাত রাস্তার মাথা) অবৈধ ভাবে তালা ঝুলিয়ে দেন এই কর্মকর্তা। এছাড়া লীজকৃত বিভিন্ন নার্সারীকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে  তার বিরুদ্ধে ।ফোর স্টার সিএনজি পেট্রোল পাম্প মালিক আনোয়ার হোসেন বিষয়টি স্বীকার করেন।

২৪শে অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে রেলের অধীনে নরসিংদী জলাশয় পাঁচ বছরের জন্য লীজ প্রদানে টেন্ডার আহবান করে তা ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারীকে দেওয়া চেষ্টা করলে তাতে ব্যর্থ হয়ে রেল শ্রমিক দল ও যুবদল নেতা কতৃক দরপত্র ছিনতাই হয়েছে বলে ভূয়া অভিযোগকারী দিয়ে  মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করানো হয়। পরে সেই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিলের সত্যতা মিলেছে। জানতে চাইলে সুজন চৌধুরী টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করছে স্বীকার করলেও বাদবাকি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের  সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিত ছিলেন সুজন চৌধুরী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামে  ছাত্র-জনতা  হত্যা মামলার অন্যতম আসামী যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সাথে সুজন চৌধুরীর সখ্যতার বিষয়টি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব কর্মকর্তারাই জানেন।

রেলের ঠিকাদার কামাল হোসেন বলেন, সুজন চৌধুরীর সাথে সখ্যতা ছিল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি, মন্ত্রী এবং দাপুটে নেতাদের সঙ্গে। ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে সাবেক সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা প্রাইজ পোস্টিং পাচ্ছেন । প্রশাসনে থাকা এসব কর্মকর্তাকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা মানেই প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনাকে জিইয়ে রাখা। ‘

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী সরকার পতনের পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে সুজন চৌধুরীকে ঘিরে  নানা অভিযোগ ছিলো। আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জমি ইজারা, টেন্ডারে অনিয়ম, চট্টগ্রামের ভেলুয়ার দিঘীর পাড়, আগ্রাবাদ ডেবা, শহীদ শাহজাহান মাঠসহ নানা রেলওয়ে স্থাপনা স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে হস্তান্তরের অভিযোগসহ নানা অভিযোগ উঠে সুজন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। গত ১৭ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ নিয়ে জোরালো আলোচনা-সমালোচনার জেরে বিতর্কিত এ কর্মকর্তাকে ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় রেল অঙ্গনে।

সুত্রমতে,  সরকার পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কৌশলে আশ্রয় দেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ক্যাশিয়ার  সুজন চৌধুরী ।

রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমআর মঞ্জু চৌধুরী  বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যাহার করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের লিজের জায়গাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। যার উদাহরণ অনেক আছে। আমরা রেল থেকে তাকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত পদায়নের পরিবর্তন চাই। ভালো মানুষের ভালো পদায়ন চাই। ‘

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিসিএস) ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা সাব্বির ইকবালকে (১৫৫৮০) সরিয়ে সেখানে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা সুজন চৌধুরীকে পদায়নের বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে শুরু হয়েছে নানা গুন্জন।

সুত্রমতে, চট্টগ্রামের রাউজানের ঐতিহ্যবাহী কাগতিয়া মাদ্রাসার প্রধান ফটক দখল করে জেলা পরিষদের অর্থায়নে  শহীদ মিনারের  সীমানা প্রাচীর তৈরি বিষয়ে ফজলে করিমের অনুসারীদের অসহযোগীতা করেছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  সাব্বির ইকবাল। আদালত কর্তৃক ১৪৫ ধারা জারি করা সত্ত্বেও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কাগতিয়া মাদরাসার প্রধান প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করে এবিএম ফজলে করিমের অনুসারীরা। জেলা পরিষদের বরাদ্দ ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিল আটকে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল। বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে  নিজের ঘনিষ্ঠ লোক সুজন চৌধুরীকে বসিয়ে সুক্ষ্ম প্রতিশোধ নিয়েছেন।

রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে  ভারত পালিয়ে যাবার সময় বিজিবির হাতে আটক হন। ১৯ শে সেপ্টেম্বর  কঠোর নিরাপত্তায় হেলিকপ্টার যোগে তাকে চট্টগ্রাম আনা হয়েছিলো। হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো, অস্ত্রের মুখে জমি লিখিয়ে নেয়া, ভাংচুর, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ এখন পর্যন্ত ফজলে করিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

চট্টগ্রামের রাউজানের (৬ আসন) সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ফাঁসি ও তাঁর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গেল রোববার সকাল থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র–জনতা। সমাবেশে ফজলে করিমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির না করে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে মামলার শুনানির আদেশ বাতিলেরও দাবি জানানো হয়। আদালত ভবনসংলগ্ন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্র ও চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সাবেক এমপি এবিএম ফজলে করিমকে প্রশাসন থেকে সুবিধা দেবার অভিযোগ আনা হয়। এর দুদিন পরে ফজলে করিমের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত রেলের প্রধান ভূসম্পদ কর্মকর্তা সুজন চৌধুরীকে দেয়া হয়েছে জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে প্রাইজপোস্টিং।

জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী  ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে  সিআরবির ভেতরে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়েছেন রেলের প্রধান ভূসম্পদ কর্মকর্তা  সুজন চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার বদলে চট্টগ্রাম  জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে পুরস্কৃত করার বিষয়টি আমাদের জন্য দুঃখজনক। ‘

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর