25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দুদকের

আরও পড়ুন

নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম ::

সারাদেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় চলছে। সাবেক দুই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা, বর্তমান ডিআইজি থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার – যখন আলোচনার মধ্যমনি তখনই জানা গেছে চট্টগ্রামের অন্তত ৩০ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। সেই তালিকার অধিকাংশই পুলিশের ওসি। 

দুদক সুত্র জানিয়েছে, পুলিশের ওসি মীর নজরুল ইসলাম, শাহ আলম, আবুল কাশেম চৌধুরী,  সহকারী কমিশনার এ বি এম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার, ওসি সুমন কুমার দে, আবুল হাশেম, প্রদীপ কুমার দাশ, রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি। বর্তমানে এক ডজন মামলা তদন্ত করছে দুদক।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা হাসানের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার জ্ঞাত  আয়  বহির্ভূত সম্পদ উপার্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কামরুল হাসান বর্তমানে সিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা অনুসন্ধানে  আরো সম্পদ মিলবে। কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে পুলিশের উপ পরিদর্শক ( এসআই)  হিসেবে যোগ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে  ওসি, এসি,এডিসি হিসেবে পদোন্নতি পান।

দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সুত্র মতে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাহাড়তলী থানার সাবেক ওসি রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া, সন্দ্বীপ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম, বোয়ালখালী থানার সাবেক ওসি মো. সাইরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক রাজু আহমেদ, কর্ণফুলী ও নগরীর আকবরশাহ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক ওসি আনোয়ার হোসেন, আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পটিয়া থানার সাবেক ওসি মো. রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মো. শাহজাহান, ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ শেখ রাসেল, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) মো. আবুল হাশেম, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মীর নজরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহ আলম, সাবেক ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম চৌধুরী, সহকারী পুলিশ কমিশনার এ বি এম সাহাদাৎ হোসেন মজুমদার, রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুমন কুমার দে’র নাম রয়েছে এ তালিকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এ ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তার অনুসন্ধান তদন্ত চলছে। সম্প্রতি বাঁশখালীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে জিজ্ঞেসাবাদ করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় উঠা ডাকাতি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর তিন সদস্যর কমিটি করেছিলো। তবে সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নি পুলিশ।

গত বছরের অক্টোবর মাসে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শাহ আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ে মামলাটি করেন একই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন।শাহ আলম বর্তমানে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৬ নম্বর রোডের ক্রাউন ভ্যালির বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিআইও-১ হিসেবে পদায়িত ছিলেন। বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। দুদকের মামলায় তার বিরুদ্ধে এক কোটি ৭ লাখ ৪১ হাজার ৭২১ টাকা আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছিলো।

জানতে চাইলে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, ‘ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা ছাড়াও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান। তবে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু জানানো যাচ্ছে না। ‘

পুলিশ পরিদর্শক মীর নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাহানা সুলতানার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ১৭ই নভেম্বর  দুই কোটি পনের লাখ টাকার জ্ঞাত বহির্ভূত  সম্পদ উপার্জনের অভিযোগ মামলা করেছিল দুদক।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এ চলছে ১১ জন পুলিশ কর্মকর্তার অনুসন্ধান-তদন্ত। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বাকিদের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কার্যালয় ও ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দুদক।

দুদকের অনুসন্ধানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা  বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, সিএমপি ও জেলার পুলিশ পরিদর্শক কিংবা উপ পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে দুদক সোচ্চার হলেও বিভিন্ন সময়ে সিএমপির সহকারী কমিশনারসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে দুদক।

দুদকের সুত্রমতে, চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ বেশ কিছু কর্মকর্তা শাহ আমানত বিমানবন্দর ও রেয়াজউদ্দিন বাজার ভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালানে সহযোগিতা করছে – এমন অভিযোগ রয়েছে দুদকে। স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করছে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও। দুদক সদর দপ্তর থেকে তদন্তের অনুমোদন  না মেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে এসব অভিযোগ। তবে পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে সিগনাল পেলেই নগর পুলিশের  দুই সহকারী কমিশনার ও এক অতিরিক্ত উপ কমিশনারের বিষয়ে  অনুসন্ধান চালাবে দূর্নীতি দমন কমিশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর