24.3 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

ফিলিস্তিনে যেভাবে গড়ে উঠেছে কোকা-কোলা’র সাম্রাজ্য

আরও পড়ুন

ডেস্ক রিপোর্ট :::

কোকাকোলার একটি বিজ্ঞাপন চিত্রকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্নের। ফিলিস্তিনে কোকের কারখানা স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। গুগুলে সার্চ করে নেটিজেনরা জানার চেষ্টা করছেন কোকাকোলা এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক। 

ইউকিপেডিয়ার তথ্য অনুযায়ী,  দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি (NYSE: KO) একটি মার্কিন বহুজাতিক কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি। তাদের হেডকোয়ার্টার্স রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টায়।

ফিলিস্তিনে কি সত্যিই কোকা–কোলার ফ্যাক্টরি আছে কিনা সেই প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
ট্রেন্ডিং দুনিয়ার বাসিন্দাদের কাছে এখন প্রধান ট্রেন্ডি বিষয়—‘কোকা–কোলা’।

নানা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়া সেই  বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, একজন কোক বিক্রেতা এলাকার যুবকদের বোঝাচ্ছেন যে, কোকা–কোলার সঙ্গে ইসরায়েলের কোনও সম্পর্ক নেই; বরং ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। ফিলিস্তিনে কোকা–কোলার ফ্যাক্টরিও রয়েছে বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেন তিনি। এরপর সেই দোকানি কোক বর্জনকারী যুবকদের বলেন, তারা যেন ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে সত্যটা খুঁজে নেয়।

ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনের গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানা চালুর ঘোষণা দেয় কোকা–কোলা। তারও কয়েক মাস আগে থেকে অবশ্য কোম্পানিটি আংশিকভাবে কোকের বোতল তৈরির কারখানা চালু রেখেছিল সেখানে। কোকা–কোলা কর্তৃপক্ষ  দাবি করেছিল, গাজায় কোকা–কোলার ফ্যাক্টরি তৈরি হলে সেখানকার বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

এরপর ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে স্থানীয় ন্যাশনাল বেভারেজ কোম্পানির (এনবিসি) সঙ্গে যৌথভাবে পশ্চিম তীরের কাছে রামাল্লায় কারখানা চালু করে কোকা–কোলা। উদ্বোধনী দিনে এনবিসির চেয়ারম্যান ও ফিলিস্তিন অঞ্চলে কোকা–কোলার প্রধান জাহি খৌরি বলেন, ‘আজ এক ঐতিহাসিক দিন। কোকা–কোলার ও ফিলিস্তিনের জন্য এই দিনটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

কোকা-কোলার তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহতার কেন্ট বলেন, ‘সারা বিশ্বের সম্প্রদায়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হিসেবে আমরা গাজায় নতুন কারখানা চালু করেছি। যদিও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে এনবিসির তিনটি বোতলজাতকরণ কারখানা রয়েছে, তারপরও নতুন এই কারখানা গাজার অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে নিঃসন্দেহে অবদান রাখবে।’

কোকা–কোলার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও গাজায় কোকা–কোলার কারখানা পরিচালনার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এনবিসি একটি স্বাধীন কোম্পানি। তবে কোকা–কোলার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধভাবে এটি পরিচালিত হয়। এনবিসির সঙ্গে যৌথভাবে কোকা–কোলা গাজায় স্কুল পরিচালনা, রোজায় ইফতার বিতরণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে বলেও ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে।

কোকা–কোলা যেভাবে গাজায় সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে 

১৯৯৭ সালে গাজায় কোকা–কোলার ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করেন এনবিসির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জাহি খৌরি। এরপর গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি গাজায় কোকা–কোলার সঙ্গে তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

তবে তাঁর এই ব্যবসায়িক যাত্রা মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের চলমান সংঘাতের মধ্যে তাঁকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হয়েছে।

নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জাহি খৌরি ধীরে ধীরে কোকা–কোলার সঙ্গে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন এবং চারটি বোতলজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠাতা করেন। পাশাপাশি কোকা–কোলার তিনটি সরবরাহ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেন।

কূটনীতিক সংস্থা মিডল ইস্ট কোয়ার্টেটের প্রধান কিটো ডি বোয়ের বলেন, ‘গাজায় তাঁর প্রভাব বর্ণনা করা কঠিন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদে কারখানা চালু রাখা ও ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ নয়।’

কোকা–কোলার মতো একটি বৈশ্বিক কোম্পানির করপোরেট অংশীদার জাহি খৌরি এবং এটিই এখন তাঁর প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁর হাত ধরে কোকা–কোলা যেমন ফিলিস্তিন অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে, তেমনি গাজায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পেরেছে।

ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা স্কল ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যালি ওসবার্গ বলেন, ‘কোকা–কোলা এই অঞ্চলে দারুণভাবে সফল হয়েছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, যার হাত ধরে ফিলিস্তিন অঞ্চলে কোক তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, তিনি জাহি খৌরি।’

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানি ও পণ্য বয়কটের ঘোষণায় বিভিন্ন দেশে এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্রান্ড। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে কেন্দ্র করে বয়কটের ডাকে বিখ্যাত ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস এখন লোকসানের মুখে। শুধু ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেই নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে পণ্য বয়কটের ডাক আসে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরাইয়ের তৈরী কিংবা তাদের অর্থদাতা কোম্পানীগুলোর পণ্য বয়কটের ডাকা দিয়েছে গাজার সমর্থকরা। এর ধারাবাহিকতায় এবার আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে বহুজাতীয় কোম্পানী কোকাকোলা-পিপসির পণ্য বয়কটের ডাকা দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলি অথবা ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া প্রতিষ্ঠানের পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। এরমধ্যে  উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় কোকাকোলা ও পেপসি বয়কটের ডাক ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি এই কোম্পানিগুলোর ‘সমর্থনের’ কথা উল্লেখ করে এই ডাক দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত গরমকাল ও ছুটির সময় কোমল পানীয়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। কিন্তু মরক্কানদের এই মার্কিন কোমল পানীয় জায়ান্ট থেকে দূরে থাকার জন্য মানুষকে অনুরোধ করেন দেশটির অ্যাক্টিভিস্টরা।

মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ বলছে, বয়কট কোকাকোলা হ্যাশট্যাগসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, কোকাকোলার পণ্য কিনে খাওয়ার মানে হলো ফিলিস্তিনি ভাইদের রক্ত পান করা।

অনেকে আবার এসব কোমল পানীয়ের বদলে মরোক্কান পুদিনা চা ব্যবহারের জন্য যুক্তি দিচ্ছেন। তাদের দাবি, কোমল পানীয়ের বিকল্প হিসেবে এই চা ব্যবহার করা হলে তা হবে স্বাস্থ্যকর।

সেই সঙ্গে এটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও ভালো হবে। কেউ কেউ অবশ্য কোমল পানীয়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক জুস বা মরক্কোর তৈরি পানীয় বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যাই হোক, কোকাকোলা ও পেপসির স্থানীয় কর্মীদের ওপর এই ধরনের বয়কটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর