26.3 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

ভালবাসার নিদর্শন রেখেছেন হোগলের ‘কৃষ্ণকলি ‘রহিমা

আরও পড়ুন

হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর

আকার ইঙ্গিত নি:শব্দে কিংবা শব্দে মানবজীবন ভালোবাসার ছন্দমালায় কাঁথা। সংস্কৃতিভেদে ভালোবাসা প্রকাশে ছান্দে ভিন্নতা রয়েছে তবে ভালোবাসা শূন্য সংস্কৃতি নেই। বিশ্ব ভালবাসা দিবস পশ্চিমের দুনিয়ায় যা ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত। বাংলায় ফাগুনে গাছে গাছে যেমন শিমুল ও পলাশ ফুটছে ঠিক তেমনি ভালোবাসা দিবসের হাওয়াও দোলা দিচ্ছে। এমন দিনে বিরল এক ভালোবাসার গল্প শোনালে কেমন হয়? হয়ে যাক তাহলে।

কৃষ্ণকলি কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক, মেঘলা দিনে দেখেছিলাম মাঠে, কালো মেয়ের কাল হরিণী চোখ। ১৩ বছর আগে যেন সেই কালো হরিণ চোখেই বাধা পড়েছেন ক্রিস হোগল। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান হোগল ভালোবেসে বিয়ে করেছেন রবি ঠাকুরের কৃষ্ণকলির কালো মেয়েকে। এই কালো মেয়ে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের আবুল খার মেয়ে রহিমা খাতুন। শুধু ভালোই নয়, ব্যবধান ছিল বিত্তেরও। ক্রিস হোগল পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার আর রহিমা জীবিকার সন্ধানে বোম্বাইয়ের বস্তির বাসিন্দা ছিলেন। অথচ প্রেমের বন্ধন এসব ব্যবধান ঘুচে দিয়েছে।

ক্রিস হোগল আজকের পত্রিকাকে জানান এক যুগ আগে তিনি ভারতের বোম্বাইয়ের একটি কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনাচক্রে একদিন বোম্বাইয়ের রাজপথে রহিমার সাথে তার দেখা।

রহিমা জানান শৈশবেই তার বাবা আবুল খাঁ ওমা মেহেরুন্নেসা অভাবের তাড়নায় ভারতে পাড়ি জমাই। তাদের সঙ্গী হন তিনিও। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা ছিলেন শ্রমিক। অভাবের কারণে ১৩-১৪ বছর বয়সেই কিশোরী রহিমাকে তার বাবা বিয়ে দেন। সেখানে রহিমা তিন সন্তানের জন্ম হয়। দরিদ্র রহিমাকে এক সময় ছেড়ে যান তার স্বামী। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে রহিমা ও চলে যান বোম্বাইতে। কাজের সন্ধানে আশ্রয় নেন বস্তির খুপরিতে।

হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় বোম্বাইয়ের রাস্তায় পরিচয় হয় আমি কি হোগলের সাথে। হোগল সামান্য হিন্দি বলতে পারতেন রহিমা ও পারতেন। এভাবেই শুরু হয় ভাব বিনিময়। পরিচয়ের ছয় মাসের মাথায় ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল দুজন বিয়ে করেন। তিন বছর পর নতুন কাজে যোগ দিতে চীনে চলে যান হোগল। সঙ্গী হয়ে চীনে যান রহিমা ও। সেখানে পাঁচ বছর থেকে স্বামীকে নিয়ে ছুটে আসেন কপোতক্ষের টানে মেহেরপুর গ্রামে বাপের ভিটায়। শুরু করেন দুইজন একসাথে পথ চলা। হোগল এখন পুরোদস্ত্তর কৃষক। প্রায় ১০-১২ বিঘা জমিতে নিজেই চাষাবাদ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ দম্পতির বাড়িতে দৃষ্টিনন্দিত একটি বহুতাল ভবনের কাজ চলছে। ইঞ্জিনিয়ার হোগল বাড়ির উঠানে বসে গরুর ঘাস কাটছেন। হোগর জানান, স্ত্রীর কাছ থেকে বাংলা শিখেছেন তিনি। আর রহিমা কেও ইংরেজি তালিম দেন। ক্রিস হোগল আগের স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সন্তানদের খোঁজখবর নেন তিনি।
রহিমা বলেন নতুন প্রজন্মের কাছে ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই আমরা। হোগল বলেন, আমি বহু দেশ ঘুরেছি। তবে সত্যি বলতে বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে ফেলেছি। স্থানীয়দের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। ভালোবাসা দিবসে আমরা গোলাপ বিনিময় করব, কেক কাটবো। কপোতক্ষের তীর ঘেঁষে দুজন হাঁটবো। এভাবে চোখে চোখ রেখে আমৃত্য কাটাতে চাই।

এই বাংলা/এমপি

 

 

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর