বরিশাল প্রতিনিধি :
এক সময় বরিশালের ক্রীড়াপ্রেমীদের গর্বের প্রতীক ছিল বিভাগীয় কবি জীবনানন্দ দাশ স্টেডিয়াম। জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, যুব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে মুখর থাকত এই মাঠ। কিন্তু এখন সেটি যেন অতীতের স্মৃতি—ভাঙা গ্যালারি, অসমান মাঠ, নষ্ট স্কোরবোর্ড ও অকেজো ফ্লাডলাইটে হারিয়েছে আগের জৌলুস।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর এখানে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ বনাম শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব–১৯ টেস্ট ম্যাচ, যা ছিল বরিশাল স্টেডিয়ামের প্রথম আন্তর্জাতিক (অনূর্ধ্ব–১৯) আয়োজন। এরপর দীর্ঘ ছয় বছরে বড় কোনো ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
ধীরগতির কাজ ও ব্যয়ের বাড়তি চাপ
২০২২ সালের জানুয়ারিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্টেডিয়াম আধুনিকায়নে প্রায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। মাঠ সংস্কার, গ্যালারি নির্মাণ, ইনডোর জিমনেশিয়াম ও নতুন ড্রেসিংরুম তৈরির পরিকল্পনা ছিল এর অংশ।
তবে শুরু থেকেই কাজের গতি শ্লথ ছিল। একাধিক ধাপে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে ২০২৪ সালের মে মাসে নতুন করে প্রায় ৬০ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবুও এখনো কাজ দৃশ্যমান অগ্রগতি পায়নি।
বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কহিনুর অদক্ষতা ও ধীরগতির কারণে মাঠ প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। ফলে আসন্ন বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) বরিশালে আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মাঠের দুরবস্থা আগের মতোই
জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম শুভ জানান, বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও মাঠের ড্রেনেজ ও আউটফিল্ড উন্নত হয়নি। ফ্লাডলাইট, টয়লেট ও পানীয় জলের ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
স্থানীয় ক্রিকেটার ও ফুটবল খেলোয়াড়দের অভিযোগ, মাঠে বৃষ্টির পানি জমে থাকে, পিচের মান নিম্নমানের, এবং খেলার সময় চোটের আশঙ্কা থাকে।
ফুটবলার সোহান রহমান বলেন, “বল কাদায় আটকে যায়, মাঠে অনুশীলন করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।”
দর্শকদের হতাশা
খেলা দেখতে আসা দর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, “গ্যালারি ভাঙা, টয়লেট অপরিষ্কার—পরিবার নিয়ে খেলা দেখতে আসা যায় না। অথচ একসময় এই মাঠই ছিল আমাদের গর্ব।”
প্রশ্ন রয়ে গেল — ফিরবে কি প্রাণ?
প্রায় ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম এই স্টেডিয়ামের আধুনিকায়নে এখন পর্যন্ত ৬৫ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। তবুও মাঠ খেলার উপযোগী হয়নি।
ক্রীড়ামহলের প্রশ্ন—এত কোটি টাকা খরচের পরও কি নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে বরিশালের এই বিভাগীয় স্টেডিয়াম?
এই বাংলা/এমএস
টপিক
