আল আমিন,নাটোর প্রতিনিধি:-
লালপুর-বাগাতিপাড়া এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত ৫৮ নাটোর -১ সংসদীয় আসন।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলে এখন পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৯ জন। এর মধ্যে একই পরিবারের দুজনসহ আওয়ামী লীগের রয়েছে ১৪ জন। অন্যদিকে বিএনপিতে রয়েছেন ৫ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টিতে রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও নাটোর জেলার এটিই একমাত্র আসন যেখান থেকে চারবার এমপি হয়েছেন বিএনপির সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল। তিনি দুইবার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু তালহা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই আসনটি সব দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে লালপুর উপজেলা থেকে ১৭ জন এবং বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে ১২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এদের মধ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর মধ্যে লালপুর উপজেলায় মনোনয়নপ্রত্যাশী ৮ জন। বাগাতিপাড়া থেকে মনোনয়ন চান ৬ জন।
লালপুর উপজেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ মমতাজ উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য শেফালী মমতাজের ছেলে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) রমজান আলী সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সিলভিয়া পারভীন লেনি। অপরদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান চাঁদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল হোসেন, জেলা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এবং আ.লীগ নেতা এস এম হুমায়ুন কবির।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজন। এর মধ্যে লালপুরে চারজন ও বাগাতিপাড়া থেকে একজন মনোনয়ন চান।
নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটলের সহধর্মিণী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য কামরুন্নাহার শিরিন। বয়স বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন না চাইলে তার কন্যা বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক কমিটি ও মিডিয়া সেলের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন পুতুল কিংবা পুত্র লালপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. ইয়াসিন আরশাদ রাজনকে বেছে নেওয়া হতে পারে।
এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বিমল। বাগাতিপাড়া উপজেলার মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু। এসব নেতারা প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও কৌশলে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলকে চাঙা রাখছেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এবার মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে লালপুর উপজেলা থেকে পাঁচজন এবং বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে পাঁচজন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তিনজন, তারা সবাই বাগাতিপাড়ার।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু তালহা, জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট সোহেল রানা ও ব্যারিস্টার আশিক হোসেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী ৭ জন হলেন লালপুর উপজেলার থেকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান, ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন পরশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নাটোর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাকসুদুর রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত লালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। অপরদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে মনোনয়ন চান জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন ও কেন্দ্রীয় কমিটির অপর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল কুমার রায়।
জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে স্বাধীনতার পর থেকে ১১টি জাতীয় নির্বাচন বিশ্নেষণ করলে দেখা যায় এই আসনে লালপুরের প্রার্থী পাঁচবার, বাগাতিপাড়ার প্রার্থী পাঁচবার এবং রাজশাহীর চারঘাটের প্রার্থী একবার বিজয়ী হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় মোট চার মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিএনপির প্রার্থী। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নেতাকর্মীদের কাফনের কাপড় পরে ট্রেন থামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয় দলটি। তবে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই আসনে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে আওয়ামী লীগে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কোনো শেষ নেই।
তবে এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার সময়ে দলীয়ভাবে কোথাও কোনো হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে বিশেষ আলোচনায় এসেছেন বাগাতিপাড়া উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও আ.লীগ নেতা এস এম হুমায়ুন কবির। তার বড়ভাই প্রয়াত নেতা এস এম হাবিবুর রহমানকে স্মরণ করে মাঠে আছেন তিনি।