25.6 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

উৎকন্ঠা অক্টোবর জুড়ে ‘ কিছু একটা ঘটছে’

আরও পড়ুন

রাহাত আহমেদ ||

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অক্টোবর মাস জুড়ে শংকা ছড়িয়েছে অনেক আগে থেকেই। একদিকে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা,  প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর সরকার পতনের চুড়ান্ত আন্দোলন প্রস্তুতি – কি হবে কি হচ্ছে এমন  আশংকা সবখানে।

বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো তাদের রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ করে পাঁচদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রাজনৈতিক সমঝোতার পথরূদ্ধ করেছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য  বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা ইস্যু। বিশ্লেষকদের মতে  সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের সমঝোতার পথ নেই।

গ্রহনযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে  কুটনৈতিক প্রচেষ্টা কতোটা সফল হলো – সেই হিসেব নিকেশ চলছে রাজনৈতিক আলোচনায়। তবে চলতি মাসে  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে  গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গতি পেতে পারে বলে জানাচ্ছেন কুটনৈতিক সুত্রগুলো।

বিএনপি ও সরকার বিরোধী দলগুলো বলছে, অক্টোবরেই সরকারের পতন হবে। ইতিমধ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘এই অক্টোবরেই আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকব।’ অক্টোবর নিয়ে এ পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশে কি আবার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অক্টোবর আসছে? নাকি নভেম্বরে পরিবর্তন হচ্ছে পরিস্থিতি।

চলতি অক্টোবর মাস জুড়ে ঢাকাসহ সারাদেশে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে মহাপকিল্পনা হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চলতি মাসেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত অর্ধডজন বড় সমাবেশ করবে দলটি। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বোধন করা হবে অন্তত ৬ টি বৃহৎ মেগা প্রকল্প। সরকারের প্রকল্পগুলো উদ্বোধনকে সামনে রেখেই মুলত বড় সমাবেশ আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারের উন্নয়ন প্রচার ও নৌকা মার্কার পক্ষে ভোটের প্রচারে নামবেন। এর পাশাপাশি সমাবেশ গুলোতে লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে নিজেদের শক্তি ও জনসর্মথনের প্রমাণ দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। একই সঙ্গে কৌশলে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম  বলেন, ‘ আওয়ামী লীগ সরকারী দল হিসেবে সব সময় জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য রাজপথে সক্রিয় ছিলো, আগামীতে থাকবে। সরকারের উন্নয়ন প্রচারের অংশ হিসেবে আমরা ঢাকা সহ সারাদেশে জনসভা করার উদ্যোগ নিয়েছি। জনসভায় আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষন দেবেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা যেমন নির্বাচনী প্রচার কাজ চালাবে ঠিত তেমনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডও জনগণের মধ্যে প্রচার করবো। ‘

আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে আগামী ২৩ অক্টোবর মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এই উপলক্ষে ঐ দিন রাজধানীর মতিঝিলে মহাসমাবেশ করবে দলটি। মহাসমাবেশে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আজ শনিবার  (৭ অক্টোবর) বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বড় জনসভা করবে দলটি। এয়ারপোর্টের সামনে এভিয়েশন মাঠে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ২ লক্ষাধিক লোকের সমাগম করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে উত্তর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

আগামী ১০ অক্টোবর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনের উদ্বোধন করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষন দেবেন তিনি।

আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে কর্নফুরী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেল উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষন দেবেন তিনি। ঐ জনসভায় চট্টগাম ও আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে কয়েক লাখ দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না— এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ প্রশ্নই উঠতে পারে না। শুধু খালেদা জিয়াকে এই অবস্থায় রেখে নয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। ‘

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সরকারকে আর সময় দিতে চায় না বিএনপি। ৮ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত টানা নতুন কর্মসূচি দেবে তারা। ২০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত পূজার সময় কর্মসূচি দিবে না দলটি। ২৪ তাখের পর থেকেই চূড়ান্ত ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন করার পরিকল্পনা তাদের।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অক্টোবর মাসেই সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন ভবন, আদালত ইত্যাদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি ও সরকার বিরোধী দলগুলো। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে যুক্তরাজ্য বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করার কারণে আন্দোলনের রুপরেখা মুলত চুড়ান্ত হচ্ছে সেখান থেকেই।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়,  পূজার সময় কর্মসূচি দিবে না দলটি। ২৪ তাখের পর থেকেই চূড়ান্ত ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অক্টোবর মাসের শেষে পর্যায়ক্রমে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি।একইসাথে  রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে।

বিএনপির নেতারা জানায়, ঘেরাও আন্দোলনের পরবর্তীতে দেশব্যাপী অবরোধ, ধর্মঘটের মতো দেশ অচল করার কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে। সবশেষে পরিস্থিতি বুঝে হরতাল কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে আমাদের আন্দোলন কতটুকু শান্তিপূর্ণ থাকবে। সরকারের আচরণ কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে।

শুধু রাজনৈতিক দলে নয় মাঠ প্রশাসনেও দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটতে পারে মাসের শেষে। বিচার বিভাগ ও আদালতে ইতিমধ্যে পরিবর্তনের সুচনা ঘটিয়েছে। সুত্রমতে,  সিসিটিভির আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে বিচারকদের খাসখামরাও। সেই সাথে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলার জামিনের বিষয়ে  আচরনগত পরিবর্তনের দিকে চলছে উচ্চ আদালত।

অবকাশ, সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ৩৫ দিন পর আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম।

গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আজ ৭ অক্টোবর পর্যন্ত অবকাশ, সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এ সময়ে জরুরি মামলা-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিষ্পত্তি এবং বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হাইকোর্ট বিভাগে সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে দেওয়া অবকাশকালীন বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আপিল বিভাগে জরুরি বিষয়াদি শুনানির জন্য চেম্বার কোর্টে বিচারিক কার্যক্রমে পরিচালিত হয়।নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আগামীকাল রোববার আপিল বিভাগে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর