জোবাইর চৌধুরী, বাঁশখালী:::
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পূর্বে পাহাড়, উত্তরে সাঙ্গু নদী, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে ও মাঝখানে বিশাল জলকদর খাল। ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশাল পাহাড় থেকে কিছুদূর পর পর নেমে এসেছে ছোট-বড় ২৪টি ছড়া (পাহাড়ি ছড়া)। এসব ছড়া দিয়ে প্রতি বর্ষায় প্রবল গতিতে পাহাড় থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল।
এই পাহাড়ি ঢল ছড়াগুলোর ওপর দিয়ে সাঙ্গু নদী ও জলকদর খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যাবার ধারাবারিক প্রবাহমান ধারা রয়েছে। কিন্তু টানা বর্ষার জমা পানি এবং পাহাড়ি ঢল প্লাবিত হবার জন্য বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই কোথাও। পাহাড়ি ছড়ার পাড়, জলকদর খালের পাড়, সাঙ্গু নদীর পাড় এবং বঙ্গোপসাগরের বিশাল পাড়- সর্বত্র প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালি উত্তোলনও চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ফলে টানা বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢল লোকালয়, বসতভিটা, চাষাবাদি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ হানি হলেও প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগীরা আবেদন-নিবেদন করেও কূল-কিনারা পান না। বরঞ্চ যারা অভিযোগ করেন তারা নানামুখি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। এমন কী পূঁইছড়ি ইউনিয়নে ছড়ার পার দখল ও বালি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ৩টি খুনের ঘটনা হলেও প্রভাবশালীদের দমন করার কেউ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, বাঁশখালীতে ছড়া- খাল-নদী-বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত। বেড়িবাঁধের বহু উন্নয়ন কাছ হয়েছে। ছড়া খননের জন্য বরাদ্দ পেয়ে জনপ্রতিনিধিদের অসহযোগিতায় ফেরৎ পাঠাতে হয়। ছড়ার পাড়গুলো প্রভাবশালীরা দখল করে থাকায় জনপ্রতিনিধিরা দখলবাজদের সাথে লড়াই করতে রাজী নয়। কালীপুর ও বাহারছড়া ইউনিয়নের ওপর পালেগ্রাম ছড়ার খননের জন্য ৯৬ লাখ টাকার টেন্ডার পেয়েও মাত্র ৭/৮ লাখ টাকার কাছ করে বাকী টাকা ফেরৎ পাঠিয়েছি। এসব কারণে বেশ কয়েকটি ছড়া খননের জন্য প্রস্তাবনা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের ছোট-বড় ছড়াগুলো এবং বিশাল জলকদর খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়েই থাকবে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ প্রকৃতিকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে।
বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, চাম্বল ইউনিয়নের চাম্বল ছড়াটি যত্রতত্র প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। শুধুমাত্র ২ হাজার দোকান-পাটের মধ্যে চাম্বল বাজারের সীমানা এলাকায় চাম্বল ছড়ার পাড় দখল করে ২ শতাধিক অবৈধ দোকান নির্মাণ হয়েছে। প্রশাসনের কাছে গ্রামবাসী অভিযোগ করলেও প্রশাসন উচ্ছেদ করছে। বাঁশখালী প্রধান সড়কে ৩টি ব্রিজ অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলেছে। একারণে পাহাড়ি ঢল ছড়ার ওপর না গিয়ে লোকালয়ের ওপর প্লাবিত হয়েছে। গত ৮ আগষ্টের পাহাড়ি ঢলে ৩৭টি বসতবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ১৩০টি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ৩০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সবজি ক্ষেত ও পানের বরজ ভেসে লাখ লাখ টাকার কৃষি খেত ধ্বংস হয়ে গেছে। এলাকায় ঘর-বাড়ি হারিয়ে শুধু মানুষের বিলাপ ধরা কান্না চলছে। এধরণের ভয়ংকর প্লাবন আমার বয়সে কখনো দেখিনি।
এইবাংলা /নাদিরা শিমু/NS