নিজস্ব প্রতিবেদক :::
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ দূর্নীতি প্রতিরোধে দূর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা ও সাম্প্রতিক ঘটনাসমুহ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
রোববার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে রিচার্ড নেফিউর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক প্রধান কার্যালয়ে আসেন। পরে প্রতিনিধিদলটি দুদক সচিবের কক্ষে বৈঠক করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায় , যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা পর্যায়ের কাজ হচ্ছে অর্থ পাচার রোধ ও দুর্নীতি দমন করা। গত বছর বৈশ্বিক দমনবিষয়ক দুর্নীতি সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল সফরে করেন রিচার্ড নেফিউ। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশও তার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে সংস্থা হিসেবে দূর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা, সংস্থার প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সুত্রমতে, সংস্থাটি বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীর দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ডিসিপ্লিনারী একশনসহ নানাবিধ আলোচনায় স্থান পেয়েছে দুদকের সাবেক উপ পরিচালক শরিফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতিও। ঢাকায় অবস্থানকালে টিআইবিসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক করবেন তারা।
কূটনীতিক সুত্রমতে, দূর্নীতি দমন কমিশনের বিভিন্ন মামলা থেকে থেকে অপরাধ প্রমাণিত হবার পরও অপরাধীদের খালাসের সুপারিশ করার মতো ইস্যুকে গুরুত্বের সাথে দেখছে প্রতিনিধিদল। সফরের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতিও। শরীফ উদ্দিন এক সময় চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গা নাগরিকদের ২০টি এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। বহু লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। দূর্নীতির বিরুদ্ধে অংশ নিয়ে শরীফ উদ্দিন অনেকের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। সেই ‘অনেকের’ ইশারায় ২০২১ সালের জুনে তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়েছিল।
তিনি পটুয়াখালী থেকে ছুটিতে চট্টগ্রামে আসলে পরের বছরের ৩০ জানুয়ারি রাতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন কোম্পানির দুজন কর্মকর্তা বাসায় গিয়ে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তিনি কীভাবে দুদকে চাকরি করেন তাও তাঁরা দেখে নেবেন বলে জানিয়ে গিয়েছিলেন। হুমকি দেবার ১৬ দিনের মাথায় দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। এমন সিদ্ধান্তের পর দুদকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতে উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতি নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা দূর করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
কূটনীতিক সুত্রমতে, চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শরীফ উদ্দিন। তাকে কোন ধরনের কারণ দর্শাও নোটিশ না দিয়ে’ অপসারণ করাকে ‘অসাংবিধানিক’ কিনা এবং ‘প্রভাবশালী মহলের’ রোষানলের শিকার হয়েছেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক কমিটি।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক কমিটি বিভিন্ন দেশে দূর্নীতি ও দূর্নীতি দমন সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে থাকে। ১৯৯১ সাল থেকে, ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট থেকে তহবিল নিয়ে, OPDAT বহির্বিশ্বে বিশেষজ্ঞ সহায়তা এবং কেস-ভিত্তিক পরামর্শ প্রদান করে আসছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এমনদূর্নীতিমুক্ত বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক কনভেনশন, প্রোটোকল এবং দূর্নীতি দমনে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নে কাজ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংস্থাটি।
এইবাংলা /তুহিন