24 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

প্রয়াত স্বামীকে দেওয়া কথা রেখেছেন লিপি আক্তার,ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাশ

আরও পড়ুন

আল আমিন, নাটোর প্রতিনিধি :-

করোনাকালে স্বামী মারা যাওয়ার সময় লিপি আক্তারকে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বামীর কথা রেখেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তিন সন্তানের জননী লিপি আক্তার চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষা দেন। তাঁর ছেলে লিয়াকত আলীও এসএসসি পরীক্ষা দেয়। আজ শুক্রবার ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ছেলে লিয়াকত আলী জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আর মা লিপি আক্তার পেয়েছেন জিপিএ-৪.৫৪। তবে এই আনন্দের মধ্যেও প্রয়াত স্বামীর কথা মনে করে চোখের জল ফেলছেন লিপি আক্তার।

লিপি আক্তার নাটোরের সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মরহুম লোকমান হোসেনের স্ত্রী। তিনি বর্তমানে চামারী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য ও সেলাই প্রশিক্ষণ উদ্যোক্তা।

লিপি আক্তার ফলাফল প্রকাশের পরে জানান জানান, পরিবারের অসচ্ছলতা কারণে ২০০০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আমি লেখাপড়া জানি না বলে শিক্ষিত বউ পাইনি। তবে ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি তুমিও লেখাপড়া করতে পারো,খরচ আমি বহন করব।’ কিন্তু আজকাল করে পড়ালেখা শুরু করা হয়নি। দুই মেয়ে ও এক ছেলের লালনপালন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। করোনার সময় স্বামী মারা যান। মৃত্যুর আগে তাঁকে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করার কথা বলেন। স্বামীর পরামর্শে তিনি স্থানীয় চককালিকাপুর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করেন। ছোট ছেলে লিয়াকত হোসেন এসএসসি ফরম পূরণ করার সময় তিনি নিজেও ফরম পূরণ করেন। তাঁর বড় মেয়ে লিমা খাতুন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ছোট মেয়ে লিজা খাতুন নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় লিপি আক্তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

লিপি আক্তার বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে পাস করে খুব ভালো লাগছে। তবে স্বামীর কথা মনে পড়ায় মন খারাপ হচ্ছে। তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।’ আগামী দিনেও সন্তানদের পাশাপাশি তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান বলে জানান।

ছেলে লিয়াকত আলী বলে, ‘আমাদের মানুষ করতে মা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন। এর পাশাপাশি এলাকার মানুষের জন্যও তাঁর মন কাঁদে। তাঁদের জন্যই ২০২২ সালে তিনি চামারী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে অন্য নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেন। এত কিছুর পর মায়ের ফলে আমি বিস্মিত হয়েছি।’

প্রতিবেশী আবু তাহের বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর লিপি আক্তার জীবন পাল্টে ফেলেছেন। তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেও শিক্ষিত হচ্ছেন। আমরা তাঁর জন্য গর্ব বোধ করি। তাঁর সাফল্য কামনা করি।

এইবাংলা /নাদিরা শিমু/NS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর