25 C
Dhaka
Thursday, October 2, 2025

পটুয়াখালীর বাউফলে একই পরিবারে হাফেজ ৬৬ জন

আরও পড়ুন

গোপাল হালদার, পটুয়াখালী::

পটুয়াখালীর বাউফলে পবিত্র কোরআন শরিফের হাফেজ হয়েছেন একই পরিবারের মোট ৬৬ জন। ইতিমধ্যে এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জেলায় সুনাম কুড়িয়েছেন সদর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রাম এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান হাওলাদার।

শাহজাহান হাওলাদার মৃত হাজী নূর মোহাম্মদ হাওলাদারের ছোট ছেলে। বাউফল সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭১ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। নিজের পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির ৩ একর সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি নির্মাণ করেছেন ১২টি মাদরাসা ও ৩টি মসজিদ। তার ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ে কোরআনের হাফেজ। তাদের বংশধররাও এখন হাফেজ হয়ে সংখ্যাটি বাড়িয়ে চলেছেন। ২ বছর আগে তাদের পরিবারে হাফেজ ছিলেন ৫৭ জন আর এখন ৬৬ জন।

শাহজাহান হাওলাদারের বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা মজিবর রহমানের ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ মোট ৮ জন হাফেজ । দ্বিতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা নূর হোসেন। তার ৩ ছেলে ৩ মেয়ে ও মেয়ে জামাইসহ পরিবারে মোট ৮জন হাফেজ। তৃতীয় ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু বকর। এই পরিবারে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্য ৩ জন হাফেজ। মেয়ে জামাইসহ মোট হাফেজের সংখ্যা ৬ জন। চতুর্থ ছেলে হাফেজ ইব্রাহীম। ১ মেয়ে ৪ ছেলে ও মেয়ে জামাইসহ হাফেজ সংখ্যা ৬ জন। পঞ্চম ছেলে হাফেজ জোবায়ের। তাদের পরিবারের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে তারা সবাই হাফেজ। এই পরিবারে মোট হাফেজ সংখ্যা ৬ জন। ছোট ছেলে হাফেজ হুজাইফা। ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ১ জন হাফেজ। তাদের পরিবারে মোট হাফেজের সংখ্যা ২ জন।

শাহজাহান হাওলাদারের ৪ মেয়ে। প্রথম মেয়ে হাফেজা খাদিজা। তার পরিবারে ছেলে মেয়ে, ছেলের বউ এবং মেয়ে জামাইসহ হাফেজ ১১জন। দ্বিতীয় মেয়ে হাফেজা আসমা। তাদের সংসারে ছেলে-মেয়ে ও মেয়ে জামাইসহ হাফেজের সংখ্যা ১০ জন। দ্বিতীয় মেয়ে হাফেজা খানসা। তাদের সংসারে ছেলে-মেয়ে ও মেয়ে জামাইসহ মোট হাফেজের সংখ্যা ৬ জন। সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে হাফেজা আম্মারা। তাদের সংসারে ২ ছেলে ১ মেয়েসহ মোট হাফেজের সংখ্যা ৩ জন।

শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে হাফেজ জোবায়ের হাওলাদার বলেন, বাবার পাঁচ নম্বর ছেলে আমি। আমরা ৬ ভাই ৪ বোন। বড় ভাই সে সৌদি আরবে জেদ্দায় থাকেন সেখানে মসজিদের ইমাম। তার ৬ সন্তান হাফেজ। আমাদের অন্যান্য ভাইয়েরা ও বোনেরা তাদের সন্তানরা হাফেজ হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। আমি এই মাদ্রাসার পরিচালনা করতেছি এখানের প্রধান শিক্ষক আমার স্ত্রী তার। হাতে এখানের শত শত মেয়েরা হাফেজ হয়ে এইসব অঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন।

শাহজাহান হাওলাদার বলেন, আমার পরিবারের ছেলে মেয়ে নাতি বউসহ ৬৬ জন হাফেজ হাফেজা রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনই আন্তর্জাতিক হাফেজ, আমি সাতখানা কিতাব লিখেছি, সবার কাছে আমার অনুরোধ রইল আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদেরকে হাফেজ হাফেজা বানাবেন।

আমার ছেলে ও ছেলের বউয়েরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় এখন হাফেজ বানানোর শিক্ষা দিচ্ছে। আমি কোন দান বা সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি, আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি ও মামাবাড়ির সম্পত্তি থেকে তিন একর জমি বিক্রি করে মাদ্রাসা ও মসজিদ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা তিনি হাফেজদের খুব ভালবাসতেন, ছোটবেলা থেকেই কেমন যেন হাফেজদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও সম্মান বেশি ছিল। বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই মারা যাওয়ায় আমার পক্ষ থেকে হাফেজ হওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি চিন্তা করেছি আমার ছেলে সন্তানদের সবাইকে হাফেজ বানাবো। তারা ইসলাম প্রচার করবে। আল্লাহ কবুল করছে। তাই আজ পরিবারে এতো হাফেজ হয়েছে।

বাউফল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, শাজাহান হাওলাদার একজন ভদ্র মানুষ ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার পরিবারের ৬৬ জন হাফেজ আল্লাহর পথে ধাবিত করতে পেরেছেন। এটা নিতান্তই গর্বের বিষয় আমাদের বাউফল ইউনিয়নের জন্য। তারা হাফেজ হয়ে ও ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভালো টাকা পয়সা উপার্জন করছে যা সারা বাংলাদেশে উদাহরন তৈরি করছে। তারা সবাই খুব স্বাবলম্বী।

এইবাংলা/ তুহিন /পটুয়াখালী/সিপি

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর