::: নাদিরা শিমু :::
দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সহযোগী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গত ৭ ই জুন গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ১১ জুন ( রবিবার) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তাকে জেল গেটে জিজ্ঞেসাবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। রবিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হাকিমের আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায়। পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার কফিল উদ্দিন খান ও শাকিল আহমেদ নামের এক ভুক্তভোগী মামুনের বিরুদ্ধে জমি দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
রবিবার তাকে আদালতে তোলা হলে কিশোর গ্যাংকের অনেক সদস্য কোর্ট বিল্ডিংএ হাজির হন। পাঁচলাইশ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকুর ফারুকী নামের এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ আল মামুনকে ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে আদালত পাড়ায় হইচই শুরু করেন। গণমাধ্যমে মামুনের সাথে শিবিরের সাজ্জাদের সাথে একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়। এছাড়া সরকারি দলের আড়ালে শিবিরের সাজ্জাদ বাহিনীর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, রবিবার আদালত পাড়ায় মামুনের পক্ষে সাফাই গাওয়া ব্যক্তি শাকুর ফারুকী পাঁচলাইশ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অথচ ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামুনের সাথে সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে স্টাটাস দিয়েছিলেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকুর ফারুকী । তিনি লিখেছিলেন,
‘ সদ্য দুবাই ফেরত আব্দুল্লাহ আল মামুন গত এক বছর যাবত পাঁচলাইশ ওয়াডের আলোচিত নাম । কেউ বলে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা, কেউ বলে কান্ডারী কেউবা বলে দিশার আলো, কেউ বলে……. কিন্তু সে নিজে বলে পাঁচলাইশ যুবলীগ ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমার হিতাহিত জ্ঞান ভুলে অনেক সময় আমাদের রাজনৈতিক গুরু ( গরু) ও দাবি করে বসে, মাঝে মাঝে দেখি তাকে খুশি করার জন্য তার সভাপতিত্বে অনেক রাজনৈতিক রতি, মহরতীকেও তার সভায় উপস্থিত থাকতে। আমাদের কাছে অনেক পূর্বেই তার কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে তথ্য ছিল বলে আমরা সবাইকে সে সময় জানাইয়াছিলাম । কেউ শুনেছেন কেউবা আব্দুল আল মামুনের অর্থের পায়ে পদদলিত হয়েছেন । চাঁদাবাজি, জবরদখল,বেয়াদবির কথা অন্যদিন লিখবো । ছবিতে দুবাইয়ে শহীদ কমিশনার হত্যা ও বিভিন্ন হত্যার আসামি জামাত শিবির ক্যাডার সাজ্জাদকে মামুন মিষ্টি খাওয়াইতেছে এবং তার সাথে আনন্দ নিত্য রত । তাকে পাহারাও দিত সে। তাইতো বলি যার বংশে বাঁশের বাঁশিতে ফু দিতে দেখি নাই, শুনি নাই, এনাকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খার বাঁশি বাজাবে । বাহ বাহ তলে তলে এতদূর ছি ছি ছি ….. এখন আপনারাই বলুন এই জামাতি অনুপ্রবেশকারীর থেকে দেশ ,জাতি তথা সমাজকে রক্ষা কর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য কিনা’
দীর্ঘ ছয় বছর পর মামুনকে ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তির সৃস্টি করেছেন শাকুর ফারুকী। শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সহযোগীর পক্ষে সাফাই গাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তার দ্বৈত চরিত্র ফুটে উঠেছে।
গণমাধ্যমে আবদুল্লাহ আল মামুনের চাঁদাবাজি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর আবদুল্লাহ আল মামুনকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। কিন্তু আদালতে তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুকী । এ বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায় ভুক্তভোগীদের।
সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের নামে নগরীর বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া, চালিতাতলী, হাজীরপুল, চান্দগাঁও এলাকার শমসের পাড়া, পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায় নিরবে চাঁদাবাজি করে আসছেন। তার বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলেন নূরনবী ওরফে ম্যাক্সন ও মঈনুদ্দিন রাশেদ ওরফে ভাগিনা রাশেদ। ইতিমধ্যে এদের মধ্যে সরওয়ার এবং মো. ফিরোজ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। এইট মার্ডার ছাড়াও একটি অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নুরনবী ওরফে ম্যাক্সন গেল বছর ভারতের কোলকাতায় আশ্রয়দাতা এক নারীর হাতে মারা গেছেন। আদালত সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি অস্ত্র মামলায় সাজ্জাদকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মামুন জান পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই পালিয়ে যান। সেই পাসপোর্ট অনুযায়ী ‘নিজের নাম’ ‘পিতার নাম ‘ পরিবর্তন করে মামুন পাসপোর্টটি সংগ্রহ করেছিলেন ২০০২ সালের ১৯ শে মে। সেই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৮ ই মে। ‘ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ‘ নামে সেই জাল পাসপোর্টটি তৈরি করেছিলেন মামুন। নিজের পিতার নাম মোহাম্মদ ইউনুচ হলেও পাসপোর্টে লিখেছেন ‘ মোহাম্মদ আলী’। হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ মাদার্শার ঠিকানা ব্যবহার করে এই জাল পাসপোর্ট তৈরি করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ২০০৭ সালের ৩রা আগস্ট সেই জাল পাসপোর্টটি নবায়নও করা হয়েছে। দুবাইয়ে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ, মামুনের ছত্রছায়ায় আস্তানা গেড়েছিলেন। দেশ থেকে পালিয়ে এইড মার্ডারের আসামী ‘বেলাল উদ্দিন মুন্না’ যোগ দিয়েছিলেন তাদের সাথে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে , আব্দুল্লাহ আল মামুনই মুলত সাজ্জাদের হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন বায়েজিদ থানার ওয়াজেদিয়া, চালিতাতলী, হাজীরপুল, চান্দগাঁও এলাকার শমসের পাড়া, পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায়। এসব এলাকায় বাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে জমি ক্রয়-বিক্রয়, জমি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, শিল্পকারখানা থেকে ভাসমান দোকান ও পরিবহন স্ট্যান্ড কেন্দ্রিক বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে সক্রিয় বিদেশে পলাতক ইন্টারপোলের রেড নোটিশধারী শিবিরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ বাহিনী। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবন মালিক ও শিল্পকারখানার মালিকদের ফোন করে চাঁদা দাবি করেন তিনি ; মামুন নিজের কিশোর গ্যাং দিয়ে সংগ্রহ করে চাঁদা। তার কথামতো চাঁদা না দিলে টার্গেট করা ব্যক্তির বাসাবাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলিবর্ষণ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করে মামুনের নেতৃত্বাধীন তিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার হবার পর থেকে আওয়ামী লীগের কিছু বিতর্কিত নেতা তাকে ছাড়িয়ে নিতে তদবির শুরু করেন৷ তাকে আদালতে আনার পর আদালতের বারান্দায়ও তাদের তদবির অব্যাহত ছিলো।