::: নিজস্ব প্রতিবেদক :::
শাহ আমানত বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি শিথিল, সহজ শর্তে শুল্ক প্রদানের সুবিধা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে কার্গো করে মালামাল পাঠানো ও খালাস এবং নিয়মিত কার্গো ফ্লাইট সার্ভিস দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা কার্গো পণ্য খালাস বন্ধ রেখে হয়রানি, কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃস্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের শীর্ষ কর্তার একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে কার্গো পাঠানো বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনারের অমূলক সিদ্ধান্তের কারণে ২৫ টন পণ্য ওয়্যারহাউজে পড়ে আছে। লেট চার্জ হিসেবে বাড়তি মাসুল গুনতে হচ্ছে প্রবাসীদের । এছাড়া দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঁচ শতাধিক কার্গো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। দাবিগুলো হলো ১. প্রবাসীদের স্বার্থ বিবেচনায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে সহজ শর্তে প্রবাস থেকে দ্রব্যাদি পাঠানো এবং হয়রানিমুক্ত খালাসের ব্যবস্থা। ২। জাহাজে করে ইউ ব্যাগেজে একজন প্রবাসীর পরিচয় ব্যবহার করে ছয় হাজার কেজি পণ্য আনছেন, কিন্তু এয়ার কার্গোতে করে আনা একশ কেজির উপরে পণ্য আটকে রাখা হয়েছে। বাড়তি চার্জ ছাড়া প্রকৃত যাত্রীদের পরিচয় যাচাই করে আটকে রাখা পণ্য ছাড়ের ব্যবস্থা নেয়া।
৩। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রবাসী স্বার্থবিরোধী আচরনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন।
জানা যায়, ভারতসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা নিজের দেশে সহজভাবে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে এয়ার কার্গোতে পণ্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া এবং এক্ষেত্রে প্রবাসী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করার দাবি জানান তারা।
জানতে চাইলে কার্গো ব্যবসায়ীরা বলেন, বেশ কয়েকমাস যাবত সিলেটে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কয়েকটন কার্গো পণ্য জব্দ করে রেখেছে। এর সঙ্গে প্রবাসীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। একইভাবে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ২২ মার্চ থেকে কার্গো খালাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানেও নব্বইজন প্রবাসীর ২৫ টন পণ্য খালাসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন কাস্টমস কমিশনার ফারজুর রহমান। এছাড়া বর্তমানে ব্রিটেন থেকে বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কার্গো সার্ভিস চালু থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ প্রবাসীদের মালামাল পাঠানোর কার্গো সার্ভিস বন্ধ রয়েছে।
বিমানবন্দরের তথ্যমতে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতিমাসে নিয়মিত ফ্লাইটে কয়েক হাজার টন বিভিন্ন দ্রব্যাদি কার্গো করে বাংলাদেশে পাঠান। কাস্টমস বিভাগের একটি চক্রের সিদ্ধান্তে এটি এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে যেমন বিপাকে পড়েছেন বিমানযাত্রী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা, তেমনি মোটা অংকের অর্থ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ দেশের বিমানবন্দরগুলো। গেল পাঁচ মাস যাবত এই সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী যাত্রী ও কার্গো ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য মতে, ইমপোর্ট কার্গো থেকে ২০২২ সালের জুনে বিমানবন্দর কার্গো ওয়্যার হাউস থেকে ২৫,৫৪,৬৭৩ টাকা আয় হয়েছে । একই বছরের জুলাই মাসে ৩২,২২,৩৪২ টাকা, আগস্টে ২৯,৭৭,৭৬২ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২১,৪৭,০৮৪ টাকা, অক্টোবরে ৯,৮৪,২৭১ টাকা, নভেম্বরে ১০,০৮,০৬৭ টাকা আয় হয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ডিসেম্বর মাসে গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার কারনে পণ্য খালাস চালু করা হলে শুধু ডিসেম্বরেই ১,৪৪,৩৫,৬৪৪ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।আর কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আয় নেমে আসে চার লাখ টাকায়। চলতি বছরের মার্চ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে কার্গো ফ্লাইট চালু রাখা, কার্গো পণ্য খালাস সহজ করা আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরের অন্যতম পূর্বশর্ত। আকাশ পরিবহনে গাণিতিক হারে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও বাড়ছে না বিমান বন্দরগুলোর আনুষঙ্গিক সুবিধা। দেশের কোনো বিমানবন্দরই এখন পর্যন্ত উপযোগী দীর্ঘমেয়াদি বড় অবকাঠামো পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে ওঠেনি।
এইবাংলা/ তুহিন