24.5 C
Dhaka
Friday, October 3, 2025

নওগাঁয় অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ

আরও পড়ুন

:::শামিম হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:::

নওগাঁয় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি থেকে অবৈধভাবে এক জমির মালিককে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার (২৩ মে) শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকা ওই সম্পত্তিতে গিয়ে জমির মালিককে প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে আসেন তিনি। এতে নিজের সম্পদ রক্ষা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তার মুখে পড়েছেন ভুক্তভোগী জমির মালিক আজিজুল হক। পরে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) জেলা প্রশাসকের কাছে বিচার প্রার্থনা করে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় আরএস খতিয়ান ৮০, প্রস্তাবিত খতিয়ান ৭৬৫ এবং আরএস ২৮৪ দাগে থাকা ১৮ শতক জমি কবলা দলিল মূলে দীর্ঘ বছর যাবত ভোগ দখল করে আসছিলেন চকবিরাম এলাকার মৃত মির বক্স সরদারের ছেলে আজিজুল হক। গত কয়েক বছর আগে ওই এলাকায় “নওগাঁ মডেল টাউন” নামে একটি আবাসিক এলাকা নির্মাণের উদ্যোগ নেন সদর উপজেলার দশপাইকা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস। আজিজুল হকের জমিটি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় জমিটি তার আবাসিক এলাকায় প্রবেশ দ্বার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ এবং ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল পৃথক দুটি চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয় আব্দুল কুদ্দুস।

শর্তানুসারে জমিটি নামজারি বা খারিজ করার ১৫ দিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রি দলিল করে চুক্তিমূল্যে কিনে নেওয়ার কথা কুদ্দুসের। সেই অনুযায়ী সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর জমিটি নামজারি বা খারিজের আবেদন করেন আজিজুল। নিয়ম মেনে জমিটি যখন খারিজ সম্পন্ন হওয়ার পথে ঠিক সেই মুহুর্তে সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলামের সাথে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় একটি বাটোয়ারা মামলার রেফারেন্স টেনে জমিটি খারিজের আবেদন বাতিলের উদ্দেশ্যে মিস কেস করান আব্দুল কুদ্দুস। জমিটির একই দাগে থাকা ১৪ শতক খাস সপ্তত্তিকে আজিজুলের সড়ক সংলগ্ন সপ্তত্তির মূল অংশে আছে এমনটাই প্রতীয়মানের অপচেষ্টায় লিপ্ত হন আব্দুল কুদ্দুস।

তার নানামুখী ষড়যন্ত্র বুঝে উঠার পর ১৪ শতক খাস সম্পত্তি জমিটির কোন অংশে আছে তা সুষ্পষ্টভাবে নির্ধারণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন আজিজুল। আজিজুলের পক্ষে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় জুয়েল রানা নামে এক যুবককে। এর কিছুদিন পর ২ লক্ষ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জুয়েল রানার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদনটি প্রত্যাহার করিয়ে নেন আব্দুল কুদ্দুস। এরপর আজিজুলের জমিটি বেদখলের উদ্দেশ্যে সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলামের সাথে নতুন করে আবারো অবৈধ সখ্যতা গড়ে তোলেন আব্দুল কুদ্দুস। জমিটির খারিজের আবেদন বাতিল করে বেদখল করে খাস জমি হিসেবে দেখিয়ে কুদ্দুসের স্বার্থ সংরক্ষণে আজিজুলকে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেন সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত নওগাঁ সদরে জমিটির উপর বাটোয়ারা মামলা এবং নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন আজিজুল। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জমির উপর চলতি বছরের ৯ মে স্থিতিবস্থার আদেশ দেন আদালত। আদালত নিষেধাজ্ঞা দিলে জমিটির ওপর আদেশ সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন আজিজুল। পরে ২২ মে বিষয়টি সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলামকে জানান তিনি। এর একদিন পরই মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল ১০টার দিকে আজিজুলের জমিতে গিয়ে হাজির হন সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সাইনবোর্ডসহ জমিটি ঘেরাও করে রাখা বেড়া দ্রুত অপসারণে আজিুজুলকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি।

খোদ এসিল্যান্ডের এমন বে-আইনী কর্মকান্ডে নিজের জমি নিয়ে চরম নিরপত্তাহীনতার মুখে পড়েন আজিজুল। পরে নিজের সম্পদ রক্ষায় বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আজিজুল হক। সেই সাথে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমান বরাবর অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী আজিজুল হক বলেন, চুক্তি মতো নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা এবং মডেল টাউনের আবাসিক এলাকার মধ্যে আমাকে ২টি প্লট দেওয়ার কথা ছিলো। এছাড়াও প্লটে বাড়ি নির্মাণের সময়ও ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া কথা ছিলো। সবকিছু মেনে আমার জমি তাদেরকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু জমি খারিজ করতে গেলে কুদ্দুসের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে উঠে আসে। শর্ত ভঙ্গ করার কারণে আমার জমি এখন কুদ্দুসকে ব্যবহার করতে দিচ্ছি না। আইনগতভাবে এই জমি থেকে আমাকে উচ্ছেদ করতে না পারায় আমার জমিকে খাস হিসেবে দেখানো নীল নকশা আঁকতে শুরু করেছে কুদ্দুস।

তিনি আরো বলেন, মডেল টাউনে আমাকে যে প্লট দেওয়ার কথা ছিলো সেটা বিক্র হয়ে গেছে। এখন আমার অর্ধ কোটি টাকার সম্পত্তি ফ্রি-তে দখলে নিতে সরকারী কর্মকর্তাদের টাকা খাইয়েছে কুদ্দুস। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে এসিল্যান্ড সরকারী চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে আমাকে হুমকি দিয়ে গেছেন। এতে আমি আমার জমি রক্ষা করা নিয়ে শঙ্কিত। তাই বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

নওগাঁ মডেল টাউন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জমি দিতে পারলে আজিজুলকে প্লট ও নগদ টাকা দেওয়ার চুক্তি করা হয়েছিলো। চুক্তির সময় তাকে ৩০ লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে আমাকে তার জমি বুঝে দিতে পারেনি। এজন্য তাকে প্লট দেওয়া হয়নি। যে কাগজমূলে সে আমাকে জমি দিতে চেয়েছিলো সেখানে তার মাত্র ১ শতাংশ জমি আছে। এখানে আমি নিজেই প্রতারিত হয়েছি।

নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই জমির ওপর বাটোয়ারা মিসকেস মামলা রয়েছে। তারা উভয় পক্ষ ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কীভাবে আপোষ মিমাংসা করবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেখানে আমাদের ১৪ শতাংশ সরকারি জমি আছে। তা সনাক্ত করতে মাপজোক করতে যাওয়া হয়েছিল। তারা (আজিজুল হকসহ তার ভাই) তাদের জমি এবং আমরা সরকারি জমি বের করে নিবো। কিন্তু আজিজুল হকরা বাঁধা প্রদান করাসহ আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এইবাংলা/ তুহিন

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সবশেষ খবর