কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক মাস আগে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে একই এলাকার ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী বিশু মিয়ার বিরুদ্ধে।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গেছে।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার দিন অভিযুক্ত বিশু মিয়া শিশুটিকে ডেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে কেউ না থাকায় তিনি শিশুটির প্যান্ট খুলে তাকে শুয়ানোর চেষ্টা করলে শিশুটি চিৎকার করে ওঠে।
এ সময় অভিযুক্ত তাকে কাউকে কিছু না বলতে ৫ টাকা দেয়। শিশুটি টাকা ফেলে দিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে এসে দাদি ও মায়ের কাছে সব খুলে বলে।
অভিযুক্ত বিশু মিয়া শিশুটির বাবার মিজানুরের সম্পর্কে চাচা, অর্থাৎ শিশুটির দাদা সম্পর্কের আত্মীয় বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায়। ঘটনার সময় শিশুটির বাবা বাড়িতে না থাকায় মা পারভীন বেগম থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও কোথায় কীভাবে মামলা করতে হয় তা বুঝে উঠতে পারেননি। পাশাপাশি সামাজিক সম্মানহানির ভয়ও তাকে দমিয়ে রাখে।
ঘটনাটি ধীরে ধীরে এলাকায় জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় কিছু স্থানীয় ব্যক্তিরা শিশুটির পরিবারকে মামলা না করে গ্রামেই বিচার করার আশ্বাস দেন এবং মামলা করলে টাকা নষ্ট হবে বলে নিরুৎসাহিত করেন।
এরপর ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ চান মিয়া ও তার স্ত্রী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছাঃ শিউলি খাতুনের বাড়িতে একটি শালিস বৈঠক বসে।
ঐ বৈঠকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীসহ ইউনিয়নের সাবেক সদস্য নুরু, বর্তমান সদস্য হ্যাপি ও মহিলা সদস্য শিউলি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
শালিসে উপস্থিত অনেকেই অভিযুক্ত বিশু মিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। কেউ ফাঁসি, কেউ ইসলামী আইনে শাস্তি এবং কেউ পুলিশে সোপর্দ করার দাবি তোলেন। তবে বৈঠকে কয়েকজন মিলে একটি জুরি বোর্ড গঠন করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার ঐ টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আইনগত বিচার দাবি করলে অভিযুক্ত বিশু মিয়াকে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় ২-১ জন ব্যক্তি জুতাপিটা করে।
স্থানীয় চাপের মুখে শিশুটির বাবা আপোষে বাধ্য হন। যদিও শিশুটি, তার মা ও দাদি এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি, তবুও ভয়ে চুপ করে থাকেন।
পরবর্তীতে শিশুটির পরিবার ৮০ হাজার টাকা নিতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় নেতারা অভিযুক্তের থেকে ৭০ হাজার টাকা আদায় করেন। এই টাকা এলাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে, পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রায় ৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বিষয়টি এলাকাবাসীর মুখে মুখে আলোচিত।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, তাকে বিশু দাদা বাড়িতে ডেকে নিয়ে প্যান্ট খুলে শুয়াইলে চিৎকার করে উঠলে ছেড়ে দেয় এবং ৫ টাকা দিয়ে কাউকে বলতে না করে।
সে টাকা ফেলে চলে এসে তার দাদি ও মায়ের কাছে বলে। সে চায় পুলিশ অভিযুক্ত বিশুকে ধরে নিয়ে যাক এবং তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।
শিশুটির মা ও দাদি বলেন, “আমরা টাকা নেইনি, আমরা বিচার চেয়েছি। আমাদের বড় মেয়েকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে ঘটনাটি নাকি তার সঙ্গে হয়েছে।
এতে আমাদের মানসম্মান একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আমরা চাই অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।”
অভিযুক্ত বিশু মিয়ার স্ত্রীর নিকট ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ রকম কোনো ঘটনা হয়নি। আরো জানতে চাইলে কোন কথার উত্তর না দিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ চান মিয়া বলেন, “বিচার আমার বাড়িতে হয়েছে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে। সেখানে ফাঁসি ও পুলিশের কাছে দেওয়ার দাবি উঠেছিল। পরে স্থানীয়রা টাকা দিয়ে মিমাংসা করে। তবে মেয়ে পক্ষ টাকা নেয়নি। আমি থানায় অভিযোগ করতে বলেছিলাম।
পাঁচ লাখ টাকা লেনদেনের কথা আমিও শুনেছি, কিন্তু কে নিয়েছে জানি না।” চেয়ারম্যান বিচারে ছিলেন না তবে বিষয়টি জানেন ও প্রতিনিধি হিসেবে পরিষদের হেপি মেম্বার এবং সাবেক নুরু মেম্বার ছিলেন।
পাইকেরছড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম হ্যাপি বলেন, “বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম, তবে ধর্ষণের ঘটনা হয়নি চেষ্টা করেছে এমন অভিযোগ উঠে।
বিচারিক প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ায় জুরি বোর্ডে থাকিনি। পরে শুনেছি অভিযুক্তের কাছ থেকে নেওয়া টাকার ১৫ হাজার মসজিদে ও পানি নিষ্কাশনের কাজে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।”
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমি ওই বিচারে উপস্থিত ছিলাম না এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।
ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার গ্রাম পুলিশ বা জনপ্রতিনিধিদের করার এখতিয়ার নেই। এটি সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।”
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের না হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
এই বাংলা/এমএস
টপিক

