কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
গাছের পাতা সেলাই করে নিপুণভাবে বাসা তৈরির অসাধারণ দক্ষতার জন্য টুনটুনি বা দর্জি পাখি গ্রামবাংলায় অত্যন্ত পরিচিত। একসময় খোলা মাঠ, ঝোপঝাড়, বন ও গ্রামীণ পরিবেশে এই পাখির দেখা মিলত প্রায় সর্বত্র। এখন আর আগের মতো সহজে দেখা যায় না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ক্ষুদে পাখিটি।
দৈনিক এই বাংলার সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
টুনটুনি ফুলের মধু খেয়ে বিভিন্ন গাছে উড়ে বেড়িয়ে পরাগায়নে সাহায্য করে এবং ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষির উপকার করে। অঞ্চলভেদে টুনি, দুগাটুনটুনি, মধুচুষকি, মৌটুসি, নীলটুনটুনি, দর্জি পাখি সহ বহু নামে ডাকা হয় এদের।
এর নাম ‘দর্জি পাখি’ হওয়ার কারণ এর বাসা তৈরির কৌশল। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় মিলে খোকশা, লেবু, কাঠবাদাম, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন গাছের ১–২টি পাতা ঠোঁট দিয়ে সূক্ষ্মভাবে সেলাই করে থলে আকৃতির বাসা তৈরি করে। তুলা, লতা-পাতা, সুতা এবং গবাদিপশুর লোম ব্যবহার করে ভেতরের অংশকে নরম করে। একটি বাসা বানাতে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে।
মাঘের শেষ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম চলে। একটি দম্পতি বছরে দুই থেকে তিনবার ৪–৫টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ দুজনই ডিমে তা দেয়, এবং প্রায় ১০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে। বাচ্চা বড় হলে তারা নতুন বাসায় চলে যায়। বাসার কাছে কেউ গেলে পাখিদ্বয় টুনটুন শব্দ করে উড়ে এসে বাসা রক্ষায় তৎপর হয়—আচরণে এরা খুব চঞ্চল ও মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।
গ্রামাঞ্চলের শিশুদের কাছে টুনটুনির বাসা সবসময় আকর্ষণীয় ছিল। অনেক সময় কৌতূহলবশত বাসা নষ্ট করায় এই প্রজাতি টিকে থাকার ঝুঁকিতে পড়ছে। এর সঙ্গে বন-ঝোপ কমে যাওয়া, সবুজ পরিবেশ ধ্বংস হওয়া—সব মিলিয়ে টুনটুনি এখন বিলুপ্তির পথে।
প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এই ক্ষুদে পাখিটিকে সংরক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
কলামিষ্ট: আনোয়ার সাঈদ তিতু জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
এই বাংলা/এমএস
টপিক
- টুনটুনি
- দর্জি পাখি
- বিলুপ্তির পথে

