Site icon দৈনিক এই বাংলা

মেয়র নির্বাচনে অংশ নেবেন না আরিফ

::: বিশেষ প্রতিনিধি :::

শেষ পর্যন্ত দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ঈদ পরবর্তী স্বাক্ষাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে  অংশ না নেবার বিষয়টি  নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরআগে যদিও লন্ডন থেকে ফিরে নির্বাচন নিয়ে  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের  সিগনালের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির আহমেদ একই সময়ে যুক্তরাজ্য সফর করার পর মেয়র পদে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে নানা আলোচনায় ডালাপালা মেলতে শুরু করে। মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের আভ্যন্তরীণ সমঝোতার কথাও শোনা যায়। কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক নেতা সিটি নির্বাচন বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবার সুপারিশও করেছিলেন নীতিনির্ধারকদের কাছে। তেমন পরিস্থিতিকে  আরিফুল হকের জন্য নির্বাচনে লড়তে কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু যদি বিএনপি উন্মুক্ত না করে, তার পরও আরিফুল দল থেকে পতদ্যাগ করে প্রার্থী হবেন – এমন গুঞ্জনে পানি ঢেলেছেন তারেক রহমান। এরই মধ্যে ঈদের দিন তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে না ভেবে  চলমান সরকার হটানোর আন্দোলনে মনোযোগ দেবার নির্দেশনা দেন।

সুত্রমতে, শুক্রবার ঈদের নামাজ শেষে তারেক রহমানের সাথে স্বাক্ষাত করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন  যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তারেক রহমান বর্তমান সরকারের অধীনে  সিলেটসহ দেশের কোন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে বিষয়ে জানান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের  গত দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। টানা দুই মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফুলের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে বলে মনে করা হয়। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।

এ অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে  নানা জল্পনা চলছিল সিলেট ও লন্ডন জুড়ে। সিলেট মহানগরীতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা হলেও সিলেট জেলার রাজনীতিতে তার আধিপত্য রয়েছে । নৌকা পাওয়ার পর তিনি মাঠে তৎপর হলে ঝিম ধরে আছেন আনোয়ার বিরোধীরা। দলীয়ভাবে কোন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী না হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একটি বড় অংশ ও তাদের অনুসারীরা বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে গোপনে সমর্থন জানাতে পারেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দলটির আরেক নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাউর কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন। নির্বাচন নিয়ে তিনি ঈদের পর মুখ খুলবেন বলে শোনা যাচ্ছে । এখন মাঠে প্রচারে আছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। তবে ডানপন্থি জামায়াত ও বামপন্থিদের কেউই মাঠে নেই।

বিএনপির রাজনীতি করলেও সরকারের মন্ত্রীদের সাথেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে আরিফুল হকের। মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদে সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এবং দ্বিতীয় মেয়াদে সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বিশেষ আস্থা অর্জন করেছেন আরিফ। যা সিলেটের আওয়ামী রাজনীতিতেও অন্যতম আলোচিত বিষয়। এছাড়া গত জুনে সিলেটের বন্যার ভয়াবহতা দেখতে এসে আরিফের প্রশংসা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের মন্ত্রীদের সাথে আরিফের এই ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপির রাজনীতিতেও কানাঘুষা ও সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ দুর করতেই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার  বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তারেক রহমান।

এদিকে,  আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও প্রার্থী হতে পারেন বিএনপি নেতা  বদরুজ্জামান সেলিম।২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন দলটির তৎকালীন নগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি। ওই বছরের ৯ জুলাই তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিলো। যদিও শেষ মুহূর্তে দলীয় চাপে আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সেলিম। মহানগর বিএনপির একাধিক  সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে বদরুজ্জামান  সেলিম সিটি নির্বাচন করার জন্য ভোটার ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

সুত্রমতে,  দলগতভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও তাঁকেই প্রতিপক্ষ ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছে  আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তারপক্ষে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাম্পেইন কমিটি করেছে শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আনোয়ারুজ্জামান দলমত নির্বিশেষে  প্রবাসীদের শতভাগ সমর্থন পাবার কারণে জয়ের পথ পরিস্কার বলে জানাচ্ছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা।

এইবাংলা/ তুহিন

Exit mobile version