Site icon দৈনিক এই বাংলা

সিলেট বদলে দিচ্ছে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমীকরণ

::: বিশেষ প্রতিনিধি :::

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারসহ কোন নির্বাচনে অংশ না নেবার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রথম উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে সিসিক নির্বাচনকে। সুত্রমতে, সিলেট সিটি করপোরেশন বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। এ বিষয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের  গ্রিন সিগনাল নিয়ে রবিবার দেশে ফিরেছেন আরিফুল হক চৌধুরী।

নির্বাচনে না যাবার বিষয়ে  বিএনপির মনোভাবের কথা বিমানবন্দরে  সাংবাদিকদের জানালেও তিনি নির্বাচন করবেন করবেন কিনা সেটি স্পষ্ট করেন নি। তবে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে আরিফুল হক চৌধুরী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ  নিতে যাচ্ছেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির একাধিক নেতা।

যোগাযোগ করা হলে রহস্য রেখে আরিফুল হক চৌধুরী  বলেন, ‘ বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি । যেহেতু আমি দল করি, তাই দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নির্বাচন নিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নই। কয়েকদিন অপেক্ষা করেন, সময়ই সব প্রশ্নের জবাব দেবে।’

দলের সুত্রমতে , প্রার্থী নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট জেলা ও মহানগর  আওয়ামী লীগের ঘরের কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে মেয়র পদে জিতে আসতে চান আরিফ। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে  বিএনপিকে মাঠে রাখতে চান। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথেও আওয়ামী লীগ নেতাদের আভ্যন্তরীণ সময় সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, দীর্ঘ দিন সিলেটে রাজনীতি করেও অনেক সিনিয়র নেতা মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিত হবার কারণে ঘরের রাজনীতিতে নতুন মুখ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ছাড় না দেবার বিষয়ে সবাই একমত। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক  এ্যাড নাসির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ    সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক  জাকির আহমেদ – জোট বেঁধেছেন আনোয়ার ঠেকাতে।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল , সিলেট ২ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব,  মহানগর শাখার সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা ও মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের  নেতারা। তবে প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য,  পেশাজীবিসহ,  সুশীল সমাজের ভালো সমর্থন পাবেন তিনি।

জানা যায়, নৌকার মনোনয়ন লাভ করে চমক সৃষ্টি করা  মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেমে কাজ করবেন । সিটি নির্বাচনের প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে প্রথম চমক সৃষ্টি করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দেশে ফিরেই তিনি নগরীতে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার শুরু করেন। রাতদিন তিনি নগরীর পাড়া-মহল্লায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশেই সিসিকের মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমেছেন বলে দাবি ছিল আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর। তার কথাই শেষ পর্যন্ত সঠিক প্রমানিত হয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে কামরানের পরাজয়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে। মেয়র প্রার্থীসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের শোকজও করে হাইকমান্ড। গত দুই মেয়াদে দলীয় কোন্দলের কারণে আরিফের কাছে হেরে যান কামরান। এ অবস্থায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু পুরোনো দ্বন্দ্ব আবারও নতুন রুপ নিয়েছে। কামরানের মৃত্যুর পর সিসিকের নৌকার কাণ্ডারিকে হবেন এ নিয়ে সংকটে কাটাতে দলটির ত্যাগী তরুণ নেতা আনোয়ারের উপর আস্থা রাখেন ক্ষমতাসীন দলটি। শেষ পর্যন্ত ঘটে চমক জাগানিয়া ঘটনা। এক এগারোর সংকটকালে ঝুঁকি নেয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হয়ে উঠেন নৌকার কান্ডারী।

অন্যদিকে, বিএনপির মধ্যে সরকার ঘরনার ‘ মেয়র ‘ তকমা পাওয়া আরিফুল হক চৌধুরী টানা তিন মেয়াদে মেয়র হবার সুযোগ হেলায় হারাতে চান না। লন্ডনে  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ অধ্যাপক জাকির ও আরিফুল হক  চৌধুরী সমঝোতার কথাও জানায় সুত্রটি। সুত্রমতে, আরিফকে মেয়র পদ ছেড়ে দিয়ে দলের উল্লেখযোগ্য  সংখ্যক কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একাট্টা জেলা ও মহানগর  আওয়ামী লীগের চার শীর্ষ নেতা। এবিষয়ে নিজের দল বিএনপির  প্রতিবন্ধকতা কাটাতে বিপুল অর্থলগ্নির কথাও শোনা যাচ্ছে। গোপনে অর্থলগ্নির পুরোটারই যোগান দিচ্ছেন আনোয়ার বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতারা।

Exit mobile version