- 📅 ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ✍️ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ-ওয়ান বি ভিসা পেতে এখন থেকে গুনতে হবে অতিরিক্ত এক লাখ মার্কিন ডলার। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এইচ-ওয়ান বি ভিসার আবেদনকারীদের অতিরিক্ত ফি দিতে হবে এবং নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ হতে পারে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন
নতুন নীতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এইচ-ওয়ান বি প্রোগ্রামের ‘অপব্যবহার’ হয়ে আসছে। মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুযোগ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে এই কর্মসূচিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে এই ফি আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “আমরা বড় বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা এই অতিরিক্ত ফিতে সম্মত। এখন সময় এসেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা স্নাতকদের কাজে লাগানোর। বাইরের দেশ থেকে কর্মী এনে চাকরি কেড়ে নেওয়ার দিন শেষ হওয়া উচিত।”
প্রযুক্তি খাতের উদ্বেগ
এইচ-ওয়ান বি ভিসার অতিরিক্ত খরচ নিয়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অভিবাসন আইনজীবী তাহমিনা ওয়াটসন বলেন, “এটা অনেক স্টার্টআপ ও ছোট ব্যবসার জন্য মারাত্মক ধাক্কা। এক লাখ ডলারের অতিরিক্ত খরচ তাদের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব।”
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ জর্জ লোপেজও মনে করেন, এই ফি প্রযুক্তি খাতে ও অন্যান্য শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতাশক্তিকে ব্যাহত করবে।
গোল্ড কার্ড: নতুন ভিসা সুবিধা
এছাড়াও একই দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নতুন ভিসা স্কিম ঘোষণা করেছেন, যার আওতায় নির্দিষ্ট খাতে দ্রুত ভিসা পেতে ১ মিলিয়ন পাউন্ড বা তার বেশি ফি দিতে হবে। এখন পর্যন্ত এই ভিসার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি বাবদ মোট ১৫০০ ডলার খরচ করতে হতো। ‘গোল্ড কার্ড’ নামে পরিচিত এই ভিসা প্রোগ্রাম মূলত উচ্চ বিনিয়োগকারী বা ধনী আবেদনকারীদের জন্য চালু করা হয়েছে।
আবেদন কমছে, শীর্ষ ভিসা গ্রহীতারা প্রযুক্তি জায়ান্ট
মার্কিন অভিবাসন সংস্থা ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য এইচ-ওয়ান বি ভিসার আবেদন সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫৯ হাজারে নেমে এসেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
আগের বছরগুলিতে এই কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল অ্যামাজন। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), মাইক্রোসফট, মেটা (ফেসবুক), অ্যাপল ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালেই এইচ-ওয়ান বি ভিসা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করতে একটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে এই ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার পৌঁছে যায় ২৪ শতাংশে, যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। তুলনামূলকভাবে ওবামা আমলে এ হার ছিল ৫-৮ শতাংশ এবং বাইডেন প্রশাসনে তা কমে দাঁড়ায় ২-৪ শতাংশে।
এদিকে, ট্রাম্প পূর্বের নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রিন কার্ড প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বর্তমান সিদ্ধান্ত সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র/ফুটেজ : বিবিসি/অনলাইন ডেস্ক