Site icon দৈনিক এই বাংলা

চট্টগ্রামে কবরস্থান উচ্ছেদে ক্ষোভ: পরিবারকে না জানিয়ে লাশ স্থানান্তর, সিডিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ

রাহাত খান, চট্টগ্রাম::

চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন নোমান কলেজ রোডের একটি কবরস্থান থেকে হঠাৎ করে লাশ সরিয়ে ফেলার ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) একটি প্রকল্পের জন্য এই কবরস্থান উচ্ছেদ করা হয়। তবে পরিবারগুলোকে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে এবং ধর্মীয় বিধান উপেক্ষা করে এই কাজ করায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সিডিএ-এর অধীনে পরিচালিত কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বেরিবাঁধ ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য এই কবরস্থানটি উচ্ছেদ করা হয়। প্রায় শতাধিক কবর সম্বলিত এই কবরস্থানে এলাকার বহু মানুষের স্বজনরা শায়িত ছিলেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এই কাজ সম্পাদন করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে এবং কোনো আলেম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি ছাড়াই লাশগুলো কবর থেকে তুলে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব তার মায়ের কবর হঠাৎ দেখতে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। হঠাৎ দেখি মায়ের কবর নেই, মাটি উল্টেপাল্টে দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু অবমাননা নয়, আমাদের বিশ্বাসের ওপর নির্মম আঘাত।” একইভাবে স্থানীয় শুক্কুর আহমেদ বলেন, “যখন শুনলাম কবরগুলো সরানো হয়েছে, বুকটা হাহাকার করে উঠেছে। পরিবারকে না জানিয়ে, কোনো ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই এভাবে কবর উচ্ছেদ করা চরম অমানবিক।”

দায় এড়ানোর চেষ্টা ও ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ
ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অশীম কুমার বাবু জানান, এটি অন্য একজনের দায়িত্ব ছিল। সেই ব্যক্তি, জসিম, আবার দায় চাপান স্থানীয়ভাবে নিযুক্ত ইসমাইল নামের এক ব্যক্তির ওপর। ইসমাইল নিজেও স্বীকার করেন যে তিনি ধর্মীয় কোনো ব্যক্তি নন এবং বিষয়টি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। এই দায় এড়ানোর খেলায় ক্ষুব্ধ হয়ে জনগণ জসিমের ওপর চড়াও হয়।

এলাকাবাসীর আরও একটি বড় অভিযোগ হলো, একই প্রকল্পের কাজে যখন ২০১৭ সালে একটি হিন্দু ধর্মীয় স্থাপনা, সৎসঙ্গ বিহার, পড়ছিল, তখন সড়কের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু মুসলিমদের মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় এক নারী বলেন, “যখন হিন্দুদের সৎসঙ্গ বিহারের জমি পড়েছিল, তখন ম্যাপ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের ক্ষেত্রে কেন সেই উদ্যোগ নেওয়া হলো না?” এতে ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।

আইনজীবী মোহাম্মদ লোকমান শাহ বলেন, “বাংলাদেশ দণ্ডবিধি অনুযায়ী, কবরস্থান উচ্ছেদ বা লাশ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি, প্রশাসনের তত্ত্বাবধান এবং ধর্মীয় বিধান মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এসব না মানলে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, বিনা কারণে কবর থেকে লাশ উত্তোলন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদি কোনো কারণে লাশ স্থানান্তর করতেই হয়, তবে পরিবারের সম্মতি, আলেমের উপস্থিতি এবং যথাযথ মর্যাদা ও সম্মানের মাধ্যমে তা করতে হয়। এই ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, এই ঘটনা শুধু অমানবিক নয়, এটি ধর্মীয় ও মানবিক অবমাননার শামিল। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি দাবি করেছেন।

Exit mobile version