সানাউল্লাহ রেজা শাদ,পিরোজপুর:
পিরোজপুর জেলার দুর্গাপুর গ্রাম এখন পরিচিত ‘হাঁসের গ্রাম’ হিসেবে। হাঁস পালনের মাধ্যমে এই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। প্রতি মাসে হাঁসের ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে এসব পরিবার আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।
পিরোজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের পাশে অবস্থিত দুর্গাপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি হাঁসের দৃশ্য। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই ছোট-বড় হাঁসের খামার। কেউ শুরু করেছেন ১০-১৫টি হাঁস নিয়ে, কেউবা এখন পরিচালনা করছেন এক হাজারের বেশি হাঁসের খামার।
দুর্গাপুরসহ পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রচুর খাল-বিল, জলাশয় ও নিম্নভূমি। ফলে হাঁস পালন এখানকার মানুষের জন্য সহজ ও লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়েছে। হাঁসগুলো দিনের অধিকাংশ সময় কাটায় পানিতে ও প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার খুঁজে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পিরোজপুর জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার হাঁসের খামার রয়েছে এবং মোট হাঁসের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
গ্রামের খামারি জোবায়ের হোসেন মৃধা জানান, তিনি মাত্র ১৪টি হাঁস নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে কয়েক হাজার হাঁস। তিনি বলেন, “ডিম এবং হাঁসের বাচ্চা—দুটোই বিক্রি করি। প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় হয়। হাঁসই এখন আমাদের মূল জীবিকার উৎস।”
একই গ্রামের আবুজর মৃধা জানান, দুর্গাপুরে ছোট-বড় প্রায় ২০০টির বেশি খামার রয়েছে। তার ভাষায়, “এই এলাকায় হাঁস পালন খুব লাভজনক। হাঁসগুলো খাল-বিলে ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক খাবার সংগ্রহ করে। তাই অতিরিক্ত খাবারের খরচ লাগে না, লাভও বেশি হয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পিরোজপুরের দুর্গাপুর এখন শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি একটি সফল উদ্যোগের নাম, যেখানে হাঁস পালনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক মডেল। দেশের অন্যান্য গ্রামীণ এলাকাতেও এ ধরনের খামার গড়ে তুললে গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যেতে পারে।
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া বলেন, “এই এলাকায় হাঁস পালনকে অনেকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। হাঁস পালন করে অনেক পরিবারে ফিরেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা।”