Site icon দৈনিক এই বাংলা

বিএনপির আন্ডা রফিক যখন আওয়ামী লীগের পান্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

সাধারণ ফেরিওয়ালা থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়া রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান  রফিকুল ইসলাম একসময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও, আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্ডারে বাড়িয়েছেন সম্পদ।

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার জন্ম নেয়া রফিকুল ইসলামের দিন কাটতো বিএনপি নেতাদের ডেরায় । তাদের সহযোগিতায় জমি দখলের কাজ করাতে সিদ্ধহস্ত রফিক সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দেন। পরে আবারও নিজের জমি বোকারীর ব্যবসায় ফিরেন নারায়ণগঞ্জের এক বাঘা আওয়ামী লীগ নেতার হাত ধরে।

সুত্রমতে,  মৃত হাজী আমান উল্লাহ মিয়া এবং মাতা মৃত আনোয়ারা বেগমের বড় ছেলে রফিক বাল্যকালেই ডিমের ব্যবসা শুরু করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমঝোতা করে এলাকায় ফেরার পর একের পর এক জমি, এমনকি বসতবাড়ি ভাংচুর করে দখলের সম্রাট বনে যান রফিক।

জানতে চাইলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ রফিক আসলে দলগতভাবে বিএনপি করতো। ৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দৌড়ের উপর ছিলো। আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের সুযোগে রুপগন্জে তার জায়গা হয়েছে। যমুনা ও বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে জমির দালালী করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। একসময় খালেদা জিয়ার অফিসের সামনে টুল পেতে বসে থাকতো। বিএনপির জন্য নিবেদিত- প্রাণ ছিলো। ‘

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি বেচাকেনার ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত রফিক গড়ে তোলেন রংধনু গ্রুপ। একসময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের  ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকের বিরুদ্ধে উঠে জমি দখলের নানা অভিযোগ। এ কাজের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে দুর্ধর্ষ বাহিনী। তার বাহিনীর সহায়তায় দখল করে নেওয়া হয় পছন্দসই জমি। ২০১৪ সালে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে যুবদল-ছাত্রদলকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।

নারায়ণগঞ্জ যুবলীগের  একটি সুত্র জানিয়েছে, রফিকের শুরু যুবদল নেতা মমিন উল্লাহ ডেভিডের হাত ধরে । ডেবিটকে ব্যবহার করে মানুষের জমি দখল করে দিতেন। জমির দলিল ক্রয় করে বিক্রি করতেন। ডেবিট বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রেতাকে জমি দখল নিয়ে দিতেন। ১৯৯৬ সালে অসহযোগ আন্দোলন দমাতে ডেবিটের সাথে যুবদলের হয়ে মাঠে ছিলেন রফিক।

২০০৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে ঢাকার মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের গুলিবিদ্ধ হয়ে ডেবিট মারা যাবার পর থেকে গা ঢাকা দেন রফিক। রফিকের যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অনেক তথ্য প্রমাণ মেলে সমসাময়িকদের সাথে আলাপ করে।

সুত্রমতে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে আলোচনায় আসেন ডেভিড। বিএনপি নেতাদের আস্থাভাজন ছিলেন ডেভিড। ডেভিডের আস্থাভাজন সেই রফিক কিভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্টার পেয়েছেন সেই প্রশ্ন অনেকের।

আরেকটি সুত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য  আবদুল মতিন চৌধুরীর হয়ে কাজ করতে রফিকুল ইসলাম। বিভিন্ন তদবির করে এমপি মতিনের নাম ভাঙ্গিয়ে চলতেন এলাকায়। মুলত ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর রফিকের উত্থান ঘটে। বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন তাকে বসুন্ধরা গ্রুপের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

ধীরে ধীরে রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথেও তার সুসম্পর্ক হয়। এভাবেই যুবদলের সেই রফিকুল ইসলাম পরিচয় লুকিয়ে হয়ে যান পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান। 

এসব বিষয়ে জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,  ‘ কারো জমি দখল করেন নি তিনি। বৈধ পথে ব্যবসা করে গ্রুপ অব কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। কেউ অভিযোগ করলে প্রমাণ দেখাতে বলেন। ‘

আওয়ামী নেতাদের অনুকম্পায় দেশের অন্যতম  শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয় রংধনু গ্রুপ। অভিযোগ,  তার মালিকানাধীন  প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া হয়েছে যুবদল-বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের।

Exit mobile version