Site icon দৈনিক এই বাংলা

ভবন নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ হিসেবে প্রচার

নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম ::

হঠাৎ ফেসবুক লাইভে এসে চট্টগ্রামের  জনৈক ইকবাল বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ধরার পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। চট্টগ্রামের চকবাজার থানাধীন রাহাত্তারপুল এলাকার সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে বিএনপি নেতা হারুনের চাঁদাবাজির ঘটনা বলে অপপ্রচার করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পেশায় ইবনে সিনা হাসপাতালের চিকিৎসক ইকবালের বাড়ি নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া  নকশা না মানার অভিযোগ দেয়া হয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের তরফ থেকে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী এই বিষয়ে জমির মালিক ইকবাল গং’কে নোটিশ দিয়েছিলেন চলতি বছরের মে মাসে। জামাতে ইসলামির রাজনীতির সাথে জড়িত ইকবাল রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন। সোমবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন ইকবাল।

পরে স্থানীয় মসজিদের মোতোয়ালি ও মহল্লা কমিটির আহবায়ক  মোহাম্মদ হারুনসহ এলাকার লোকজন তাকে বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বললে তিনি ‘চাঁদাবাজি ‘র নাটক সাজান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তাকে চাঁদার জন্য মারধর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ফেসবুকের লাইভটি সহসাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকের লাইভ দেখে বাকলিয়া থানার একটি টিম গিয়ে ইকবালকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তবে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের ঘটনায় পুলিশের সামনেই বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, বেশকিছু দিন ধরে বিরোধপূর্ণ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন ইকবাল। মঙ্গলবার বিকেলে এক মহিলার বাড়ির উপর বাঁশ বেঁধে প্লাস্টার করাচ্ছিলেন তিনি। ওই মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী তাকে বারন করলে তিনি জামাতের দাপট দেখিয়ে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখেন। এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে মহল্লা কমিটি গেল শুক্রবার মানববন্ধনও করেন। কিন্তু মঙ্গলবার এলাকার লোকজনের বিক্ষোভের মুখে  ইকবাল  ফেসবুকের লাইভে এসে নিজেকে আহত দাবি করে বলেন ‘ চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতা হারুনের লোকজন তার ভাগিনা ও তার উপর হামলা করেছে। তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান ।

এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে ইকবালকে বাসা থেকে উদ্ধার করে আনেন যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির। হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ এখানে কোন মারামারির ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসী অনেক দিন থেকে চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করে আসছিলেন। ফেসবুকে দেখলাম ইকবাল সাহেব নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছেন। তিন চার মাস ধরে পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মেয়র বরাবর অবৈধ ভবন নির্মাণ কাজের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলো এলাকাবাসী। তিনি সিডিএ’র আইনভঙ্গ করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। আর আজকে দাবি করলেন বিএনপি  নেতা চাঁদা দাবি করে তাকে মারধর করেছে। সম্পুর্ন বানোয়াট গল্পো। ‘

এ বিষয়ে জানতে ডাঃ ইকবালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে আহত দাবি করে সিডিএ ‘র ঘটনাস্থল  পরিদর্শন  ও ইতিপূর্বে বাড়ি নির্মাণে অভিযোগের বিষয় এড়িয়ে যান ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাকে ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠা সেই হারুন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত নন। তিনি স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভাপতি ও মহল্লা কমিটির আহবায়ক ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃহত্তর রাহাত্তারপুল সমাজ কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে নকশা বহির্ভূত বাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছিলো চলতি বছরের ২২ মে। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের  ২৯ মে জমির মালিক ইকবালকে এক সপ্তাহের মধ্যে  কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথোরাইজড অফিসার। ২২ শে জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর চিঠি দেন বৃহত্তর রাহাত্তারপুল সমাজ কল্যাণ পরিষদ। সেই চিঠিতে ‘ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা ‘ নেবার সুপারিশ করেছেন চসিক মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন। এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বরাবর চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে বাড়ি নির্মাণের প্রতিকার চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিলো। তবে কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে ভবনের নির্মাণের অব্যাহত রাখেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিনাকী ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন পেজ থেকে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি হিসেবে ইকবালের ভিডিও পোস্ট করার পর  শুরু হয় সমালোচনা। প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হবার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব ‘ বিএনপি নেতার চাঁদাবাজির ঘটনায়।

এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন  বলেন, ‘ চাঁদাবাজির কোন বিষয় নয়। রাজনীতির বিষয়ও নয়। মুলত চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে বিরোধকে ঘিরে এলাকাবাসীর সাথে  হট্টগোল হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মালিকরা এরআগে অভিযোগ দিয়েছিলেন। কেউ দোষী হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  ‘

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হবার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও। এলাকার লোকজনের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানার পর স্পষ্ট হয় মুল ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাজনৈতিক গুটিবাজির তথ্য।

প্রতিবেদকের হাতে সিটিএসবির রিপোর্টেও দেখা যায় ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও এলাকাবাসীর বিক্ষোভের তথ্য। এক বিধবা মহিলার জমি দখল করে ডাঃ ইকবাল নকশা না মেনে ভবন নির্মাণ করছেন – এমন তথ্যও উঠে আসে সিটিএসবির প্রতিবেদনে। সিডিএ’র নিষেধাজ্ঞা না মেনে নকশা বহির্ভূত  ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে মহল্লা কমিটির সাথে  বিরোধকে রাজনৈতিক চাঁদাবাজির প্রলেপ দেবার বিষয়টিও উঠে আসে প্রতিবেদনে।

Exit mobile version