আহসান হাবীব লায়েক (জকিগঞ্জ,সিলেট)
সৌদি আরবে দালালচক্রের নির্যাতনে নিহত জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশিদ গ্রামের যুবক আব্দুস সামাদের লাশ দেশে পৌঁছানোর আগেই তার পিতা ও এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি নোটিশ ইস্যু করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, নিহত সামাদের বাবা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন, সালিশ ব্যক্তিত্ব আব্দুল মতিন বাদল, আবুল কালাম, আব্দুর রহিম, আব্দুল মান্নান ও ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে শাহপরান থানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ১০৭/১১৭ ধারায় নোটিশ পাঠানো হয়। অভিযোগকারী হলেন বারঠাকুরী ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অহিদুর রহমান আইদুর।
স্থানীয় সূত্র বলছে, অভিযুক্ত অনিক বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং তার পিতা আইদুরসহ পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের মূল কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, সামাদের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও দালালচক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভই তাদের হয়রানির পেছনে কাজ করেছে।
অভিযোগে উল্লিখিত চার সাক্ষীর মধ্যে আব্দুল হান্নান ও আব্দুল হালিম আমলশিদ গ্রামের বাসিন্দা নন, তারা হাসিতলা এলাকার মানুষ। অপর সাক্ষী জুনু মিয়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বলেন, “নিহতের দিন রাতে আইদুর তার ঘরের চাবি দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে আমি বাড়ির দেখভাল করছি। আমার ওপর হামলার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আইদুর ভারত থেকে বিতাড়িত হয়ে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে এসে আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় আশ্রয় নেন। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মসজিদ ও বিদ্যালয় কমিটিতে জায়গা করে নেন। তার বিরুদ্ধে মসজিদের অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসী দাবি করেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মুহিবুর রহমানের ভাই হওয়ার সুবাদে আইদুর দীর্ঘদিন ধরে আইনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
বারঠাকুরী ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু ও ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, “যাদের নামে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সাক্ষীদের স্থায়ী ঠিকানা আমলশিদ গ্রামে নয়, তাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা প্রত্যয়ন দিয়েছি।”
নিহতের বাবা আব্দুল মতিন বলেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা করেছি। তদন্ত চলছে। আমি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি।”
এলাকাবাসী এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, পলাতক দালালচক্রের সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।