Site icon দৈনিক এই বাংলা

শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিহীন ইউনুসের অদম্য জীবন সংগ্রাম

আল আমিন (নাটোর)

ভিক্ষাবৃত্তি কোন পেশা নয়-বাস্তবে এই কথাটিকে প্রমান দিয়েছেন নাটোরের দৃষ্টিহীন ইউনুস। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকতে দরকার কঠোর পরিশ্রম। ইচ্ছা – আগহ্য এবং অদম্য পরিশ্রমী হলে সকল প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।তেমনি ভাবে পরিশ্রম করে জীবন যুদ্ধে টিকে আছেন নাটোর সদর উপজেলার হাফরাস্তা তালতলা এলাকার আবুল কালাম আজাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিহীন পুত্র মোঃ ইউনুস আলী (২৭)।

মাত্র ৮ বছর বয়সে আব্দুল হামিদ নামে এক শিশু চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় পা বিকলাঙ্গ এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন।তারপর থেকে শুরু হয়েছে তার জীবন সংগ্রাম।শত প্রতিকূলতাও তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।বাবা আবুল কালাম তাদের তাদের ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করে সংসার পেতেছেন।এক বোন ও মাকে নিয়ে ইউনুসের সংসার।দৃষ্টিহীন জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তার এই অদম্য সংগ্রাম।

অদম্য এই যুবক ৭ বছর আগে ২০১৮ সালে ৮০ টি কোয়েল পাখি কিনে নাটোর পৌরসভার কাঁচাবাজারে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করা শুরু করেন।বর্তমানে ১৫০-২০০ টি কোয়েল পাখি বিক্রি করেন প্রতিদিন। নাটোর পৌরসভার নিচাবাজার এলাকায় মাছ বাজারের প্রবেশ মুখে বাজারে আগত ছোট-বড় সকলের নিকট পরিচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন তিনি। পাখি বিক্রির লাভের টাকায় কোনরকম খেয়ে পড়ে জীবন ধারণ করছেন।

ইউনুস আলী জানান,আর্থিক অনটনের কারণে বেশি করে পাখি কিনতে পারেন না। পার্শ্ববর্তী জেলা পাবনা – সিরাজগঞ্জ থেকে পাখি কিনে এনে বিক্রি করেন তিনি। ব্যবসার পরিধি বাড়াতে চাইলেও আর্থিক সংকটের কারনে পারছেন না। আর্থিক সহযোগিতা পেলে নিজে কোয়েল পাখি চাষ করে বাজারে বিক্রি করতেন তিনি।এতে খরচ সাশ্রয় করে কিছুটা লাভ বেশি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। দৃষ্টিহীনতা নিয়ে পাখি বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,অভ্যাস হয়ে গেছে প্রথমে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আর হয়না।তবে অনেকেই পাখি কিনে ছেঁড়া টাকা কম টাকা বা টাকা না দিয়ে চলে যায়। এতে লোকসানে পরেন তিনি।

সমাজে যেখানে অন্য প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে সেখানে আপনি দৃষ্টিহীন হয়েও পাখি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন এতে করে আপনার প্রতিক্রিয়া কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চাইনা জীবনে পরিশ্রম করে বাঁচতে চাই। পরিশ্রম করে যেটুকু আয় করি তাতেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে পড়ে জীবন ধারণ করছি। আমি এতেই সন্তুষ্ট।

এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন,ইউনুস আমাদের সমাজের জন্য একটা উদাহরণ।তাকে দেখে এবং তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে সকলের উচিত আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। ইউনুসের সাথে যোগাযোগ করে তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Exit mobile version