Site icon দৈনিক এই বাংলা

কমিশনের ভারে ডুবতে বসেছে নন লাইফ বীমা খাত

মোহাম্মদ মোশার্রাফ হোছাইন খান

কমিশনের ভারে ডুবতে বসেছে নন লাইফ বীমা খাত।এছাড়া অনিয়ম, দূর্নীতিই এ খাতের নীতিতে পরিণত হয়েছে। বীমা খাত নিয়ন্ত্রনের প্রতিষ্ঠান আইডিআরএকে কাগুজে বাঘ ছাড়া অন্য কিছু মনে করছেন না এ খাত বিশেষজ্ঞদের অনেকে। একই পরিবারের ২ জনের বেশি পরিচালক একটি কোম্পানিতে না থাকার বিধান থাকলেও এ বিধি পালন করছে না অনেক কোম্পানি।

সরে জমিনে ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক সহ কয়েকটি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার বৈদেশিক বানিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কয়েকজন আমদানী কারকের দেয়া তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে বীমা বাজারে চলছে কমিশন প্রতিযোগীতা। ব্যাংকার ও আমদানী কারকের দেয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানি ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ কমিশনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ধারার ব্যাংক সমূহের কয়েকজন ব্যাংকার জানান, বীমা কোম্পানীগুলোর এই কমিশন প্রতিযোগীতায় ব্যাংকারদের জন্যও বিপজ্জনক। তারা আরো জানান, অনেক ক্লাইন্ট বীমার বিষয়টি ব্যাংকারদের দায়ীত্বে রেখে যায়। নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর কমিশনের প্রতিযোগীতার কারনে অনেক সময় গ্রাহকের সন্দেহের চোখে দেখে।এ বিষয়টি উত্তরন হওয়া উচিৎ বলেও তারা জানান।

জানা যায়,আইডিআরএ গঠিত হওয়ার পর ২০১২ সালে নন লাইফ বীমা খাতের কমিশন প্রথা বাতিল করে ১৫ শতাংশ এজেন্ট কমিশন নির্ধারন করে।তখন বলা হয়েছিল এ পদক্ষেপে নন লাইফ বীমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কমিশন আগের সীমায় পৌছে বলে জানান এ খাতের অনেক। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একই নির্দেশনা জাড়ি করে আইডিআরএ ।এতে বলা হয়েছিল, ১ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

২০২১ সালে কয়েক মাস কমিশন প্রথা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও ২০২২ সাল থেকে অসম এ কমিশন প্রথা পুরোদমে শুরু হয়। আইডিআরএ উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, নন লাইফ বীমা খাতে কমিশন ১৪.২৫ শতাংশ। এর বেশি কমিশন আছে বলে তাদের জানা নেই।
আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের বক্তব্য সম্পর্কে কয়েকজন বীমাবিদের মতামত চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ওনারা আসলে বাংলাদেশে বসবাস করেন কিনা? যদি বাংলাদেশে বসবাস করে থাকেন বীমা খাতের কমিশনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। বীমা খাত সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে ব্যবসা করছে। এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় তাদের কেন জানা থাকবে না,অবশ্যই এটি রহস্যজনক।
এদিকে,আইডিআরএ’র দায়ীত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রেগুলেটরি অথরিটি হিসেবে আইডিআরএ’র জনবল কাঠামো অত্যন্ত দূর্বল।এ দূর্বল কাঠামো দিয়ে আসলে এত বড় একটি খাত মনিটরিং করা বাস্তবে কঠিন।এ খাতকে অনিয়ম ও দূর্ণীতি মুক্ত করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও রেগুলেটরি বডির জনবল কাঠামোর পরিবর্তন। এত স্বল্প পরিমান জনবল দিয়ে বীমা খাতের জঞ্জাল পরিষ্কার করা মোটেও সম্ভব নয়।
সূত্রটি আরো জানায়, লাইফ বা নন লাইফ বীমা কোম্পানির মালিকরা হয় রাজনৈতিকভাবে অথবা আর্থিকভাবে ব্যাপক প্রভাবশালী। এই প্রভাবশালীদের পরিচালনাধীন কোম্পানিসমূহের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে টিকে থাকাও একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

অপর একটি সূত্র জানায়, মনে করা হয়েছিল দেশের পট পরিবর্তনের পর দেশের বীমা খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের ছোয়া লাগবে । বাস্তবে তা হয় নি বরং পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।
আইডিআরএর নন-লাইফ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন একজন কর্মকর্তার কাছে কোম্পানিগুলো ৬৫ শতাংশের উপরে কমিশন বাবদ খরচ করে, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৬০শতাংশের নিচে প্রদর্শন করছে এটি কিভাবে সম্ভব এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বীমা খাতে সব সম্ভব। আপর একটি সূত্র জানান, বাংলাদেশের বীমা খাতে সরল অংক সরলভাবে ফলাফল প্রদর্শন করতে অক্ষম। এ খাতে সব অনিয়মই নিয়ম। পারিবারিক দূর্বিত্তয়ান মুক্ত করা গেলে বীমা খাতের অনিয়ম অর্ধেকের বেশী কমে আসবে বলে মনে করছেন অনেক। তারা বলেছেন, বেশ কয়টি বীমা কোম্পানি রয়েছে যেগুলো একটি বা দুইটি পরিবারের হাতে জিম্মি। এই পরিবারগুলোই বীমা মার্কেটে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। এদের কবল থেকে বীমা খাত মুক্ত করা না গেলে বীমা খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা মোটেও সম্ভব নয়। এ দিকে, বীমা খাতের সার্বিক উন্নয়নে আইডিআরএ’র বর্তমান জনবল কাঠামো ও বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামোর পরিবর্তন অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন দায়ীত্বশীল একাধিক সূত্র।

Exit mobile version