Site icon দৈনিক এই বাংলা

চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বরিশাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠকের পদত্যাগ

সানাউল্লাহ রেজা শাদ, বরিশাল::

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠকসহ তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন।

রোববার (০১ জুন) রাত ৮টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্খার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া বরিশাল জেলা ও মহানগরের অধিকাংশ নেতা নানা অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ করেন পদত্যাগ করা নেতারা। ৫০ ভাগ নেতাকর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি তাদের। বিভিন্ন প্রকৌশল দফতরে গিয়ে ঠিকাদারি কাজ পেতে নেতারা তদবির করছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। জেলা মুখ্য সংগঠক হাসিবুর আলম তুরানের নাম ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

পদত্যাগ করা নেতারা হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম তুরান, যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আবিদ ও সদস্য তাহাসিন আহমেদ রাতুল।

সংবাদ সম্মেলনে তুরান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার শক্তিতে রূপান্তর করে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশপন্থি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ প্লাটফর্মকে বিতর্কিত করেছে অনেকে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমার (তুরান) পরিচয়ে জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন চাঁদাবাজি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। কথিত কিছু নেতাকর্মী দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমজীবী মানুষের কাছে না গিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও আমলাদের দফতরে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।’

তারা দেশের মানুষকে সচেতন না করে পুরনো রাজনৈতিক ধারায় আগ্রাসী, দখলবাজি, সাম্প্রদায়িক উসকানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্য করে চলেছে বলেও অভিযোগ করেন তুরান।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য স্পষ্ট না করে উদ্দেশ্যহীন রাজনৈতিক মত তৈরি করে রাখা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীরা ব্যাপক অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু সেই নারীদের স্বাধীনতা রক্ষায় এদের কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা নিজেদের মধ্যেই কোন্দল সৃষ্টি করে চলছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যেখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু সেসব কাজ বাস্তবায়নে কাজ না করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে অনেকে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক আকাঙ্খার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এ কারণে সংগঠনটি একটি গণবিরোধী প্লাটফর্মে রূপ নিয়েছে। তাই জুলাই শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করে পদত্যাগ করাকে যৌক্তিক মনে করেছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহসিন উদ্দিন বলেন, মুখ্য সংগঠক তুরান নয়, স্থানীয় কর্মী তুরানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান থেকে আমরা কৌশল হিসেবে ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। পুলিশ কমিশনার ঘটনার তদন্ত করেছেন। তাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত করতে এ মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা এখন পর্যন্ত কেউ তদবির করিনি, যদি কেউ গোপনে করে থাকে তবে তা ভিন্ন কথা। তারা পদত্যাগ করবে তা আমাকে অবগত করেনি। সংগঠনে অনিয়ম থাকলে তারা প্রতিবাদ করতে পারতো। কিন্তু তা তারা করেননি। এখন সংগঠন তাদের ভালো লাগছে না। তাই সাধারণ অভিযোগ দিয়ে এখন দল থেকে বের হয়েছে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

Exit mobile version