Site icon দৈনিক এই বাংলা

অজ্ঞতা ও দারিদ্রতার সুযোগ নিচ্ছে রেনু সিন্ডিকেট , অভিযানে হামলার শিকার হচ্ছে মৎস্য বিভাগ

সানাউল্লাহ রেজা শাদ, বরগুনা::

বাংলা চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত নদ-নদীতে মশারি জালে শিকার করা হয় গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু। মূলত সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘রেণু সিন্ডিকেট’। যারা প্রশাসনের নজর এড়িয়েই চালাচ্ছে মশারি জালে রেণু শিকারের মহাযজ্ঞ। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অনেকেই।

সরিজমিনে দেখা যায়, উপকূলীয় নদ-নদীতে নির্বিচারে চলছে রেণু শিকার। এ কাজে মশারি জাল ব্যবহারের কারণে প্রতিদিনই ধ্বংস হচ্ছে নানা প্রজাতির মাছের লার্ভা, ডিমসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী। বরগুনার নদীর তীরবর্তী এলাকায় রেণু শিকারিদের বেশিরভাগই শিশু-কিশোর। যাদের অনেকেই ‘সিন্ডিকেটের’ দেয়া দাদনের দুষ্টচক্রে আটকে পড়ছেন।

জেলার সবচেয়ে বড় মোকামের খোঁজে পাথরঘাটায় যাওয়ার পথেই দেখা যায় মোটর সাইকেলে করে রেণু সরবরাহ করছে সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য। তাকে থামানো হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাজির হন চরদুয়ানীর সিন্ডিকেটের হোতারা।

এ ছাড়াও কয়েক ধাপে এই সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রথমে শিকারীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বাগদা ও গলদা রেণু কিনে মহাজনের কাছে বিক্রি করেন হকাররা, এরপর পাইকাররা বাড়তি দরে মহাজনদের গদি থেকে রেণু কিনে সরবরাহ করেন মোকামে। অবৈধ রেণু শিকারিদের ঠেকাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বরগুনায় প্রায় ৩০টির বেশি গদি রয়েছে। আমতলীর পচাকোড়ালিয়ার জালাল, বগীর মো. মতি, নলী এলাকার রহমানসহ তালতলী উপজেলা, বামনায় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অন্যদিকে সদরের ফুলঝুরি এলাকায় ঘরে ঘরেই চলে অবাধে রেণু বেচাকেনার কার্যক্রম।

রেণু শিকারীরা বলেন, ‘আমরা তো গরিব মানুষ, এজন্য দাদন নিয়ে আমরা এগুলো করি। মাছ চালান না দিলেই এটা বন্ধ হয়ে যাবে। আর চালান দিলে আমরা মাছ বিক্রি করতে পারব, তা না হলে পারব না।’

বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘এদের মধ্যে পুরুষ-মহিলা সবাই থাকে। তাদের বিরুদ্ধে সবসময় শতভাগ আইন প্রয়োগ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। আমাদের লোকবল স্বল্পতার জন্য একটা বাধা।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাজেদুল হক বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, যারা চাইল্ড লেবারের মধ্যে পড়বে এবং মহিলাদের কম পারিশ্রমিক দিয়ে রেণু শিকারের প্রলোভন দিয়ে থাকে। আমাদের মৎস্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে সঠিকভাবে তদারকি করে এই চক্রকে ভাঙতে হবে।’

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরিবহনের সাথে কারা জড়িত বা টোটাল সিন্ডিকেটের সাথে কারা জড়িত আছে সেগুলো যাচাই বাছাই করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Exit mobile version