Site icon দৈনিক এই বাংলা

মামলার চাপে ব্যবসায়ীরা প্রভাব আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে

রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে মামলা আসামী করা হয়েছে। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করেছে একটি চক্র। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে না থাকা ব্যবসায়ীদের নাম আসামি হিসেবে দেওয়া হয়েছে  উদ্দেশ্যমূলক এসব মামলায়।

নথি অনুযায়ী  ৪ঠা আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।  ৯ই ডিসেম্বর দায়ের করা এই মামলার বাদী জাহিদুল হাসান ওরফে ফাহিম নামের এক ব্যক্তি। ওই মামলায় ৩০ নম্বর আসামি করা হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহর ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেনকে। অথচ তিনি ঘটনার দিন শারজায় ছিলেন। গত ৮ই আগস্ট তিনি দেশে এসে ১৩ই আগস্ট আবার ফিরে শারজাহ ফিরে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেন প্রায় ৩২ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসা করছেন। শারজাহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় তার একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছেন। গত ১৮ বছর ধরে তিনি একইসঙ্গে জাপানেও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি শারজাহ ইউজড কার অ্যান্ড স্পেয়ার পার্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ্‌র অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

একইভাবে চট্টগ্রামের অন্তত এক ডজন  প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তারা কখনো রাজনীতিই করেননি। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যাননি। অথচ কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ,চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, বন্দর থানাসহ কয়েকটি থানায় মামলা করা হয়েছে তাদের নামে। আবার মামলা করার আগে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। এখন মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ফের অর্থ দাবি করা হচ্ছে। যারা মামলা-বাণিজ্য করছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনাসহ সুষ্ঠু তদন্ত করে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানান এসব ব্যবসায়ী।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর মামলাকে হাতিয়ার বানিয়ে কয়েকটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। অনেকে বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। যারা গত সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেননি, তারাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সহিংসতার ঘটনায় এত কম সময়ে সর্বাধিকসংখ্যক মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় ২০০-এর বেশি মামলা হয়। যেসব মামলায় আসামি করা হয়েছিল এক লাখের বেশি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় হাজারের মতো শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ এবং কয়েকটি দলের নেতাকর্মী নিহত হন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা হচ্ছে বিভিন্ন থানায়। ৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০০-এর বেশি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগ এজাহার একই ধরনের। প্রথম ১০ থেকে ২০ জন আসামি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তারা। এর মধ্যে অনেক মামলার বাদী চেনেন না আসামিকে। আসামিও বাদীর নাম শোনেননি কখনো। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারাও ঢালাও মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। গণমাধ্যমকে তারা বলেন, প্রতারক চক্র মামলা-বাণিজ্য করছে, তা সত্য। নিরপরাধ ব্যবসায়ী ও লোকজনদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

Exit mobile version