Site icon দৈনিক এই বাংলা

জকিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

আহসান হাবীব লায়েক, জকিগঞ্জ সংবাদদাতা::

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে চলছে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব। পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনে অথবা রাতে যান্ত্রিক দানব এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে কৃষি আবাদি জমির মাটি কেটে উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটা ও গর্ত ভরাট কাজে বিক্রি করছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। উপজেলা প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভূমিকায় কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম।

জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ জমিই ত্রি-ফসলি। আর এসব ত্রি-ফসলি জমি থেকে প্রতি বছর শত শত বিঘা জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। এর ফলে এ উপজেলা থেকে নিত্যদিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এ উপজেলার চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ীরা দিনে ও রাতে কৃষকদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করে বনে গেছে প্রভাবশালী। এ উপজেলায় গুটি কয়েকজন প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে তুলেছেন নিজেদের মাটি ব্যবসার সক্রিয় সিন্ডিকেট। এরা দরিদ্র কৃষকদের টার্গেট করে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আবার চাপে ফেলে কেটে নিচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এসব ফসলি জমির মাটি কেটে গহীন করে জমি পরিণত হচ্ছে পুকুরে। এসব জমির মাটি অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রলি করে পরিবহন করা হচ্ছে দিন ও রাতে। এরফলে অদক্ষ চালকদের কারণে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এছাড়াও মাটি ভর্তি অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রলির কারণে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বিভিন্ন ফসল। সরেজমিনে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলার প্রায় ২৫ টির বেশি স্থানে এভাবে অবৈধ পন্থায় কৃষি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে উপজেলার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। চিহ্নিত স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জকিগঞ্জ পৌরসভা, বারহাল ইউনিয়ন, বিরশ্রী, কাজলসার, খলাছড়া, সুলতানপুর, বারঠাকুরী, কসকনকপুর, মানিকপুর ইউনিয়ন ও জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে মাটি কাটা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি কেটে বিক্রি করি। আর রাতে প্রশাসন অভিযানও চালায় না। তাই সব চেয়ে নিরাপদ রাতে মাটি কেটে বিক্রি করা। সারারাত উপজেলায় শতাধিক ট্রাক্টর চলে একটাও আটক হয় না। বিষয়টা বুঝতে তো বাকি থাকার কথা না আপনাদের।
জকিগঞ্জ পৌরসভার বিলেরবন্দ এলাকার নাজিম উদ্দীন বলেন, ইটভাটার মাটি, বালু ও ইট বহনের ট্রাক্টরের চাকায় কোটি কোটি টাকার সড়ক নষ্ট হচ্ছে। মারাত্মক শব্দদূষণ ও ধুলাবালির প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাই এইসব গাড়ির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সুলতানপুর ইউনিয়নের ইলাবাজ গ্রামের ফারুক আহমদ বলেন, আমার বাড়ির উত্তর পাশে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পুকুরে পরিণত হয়েছে কৃষি জমি। প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবগত করে কোন লাভ নেই। ভূমিদস্যুরা প্রশাসন ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। এ সময় অনেকেই বলেন, জকিগঞ্জ পৌর শহরে প্রশাসনের সামন দিয়ে দিনেরাতে চলছে অবৈধ ট্রাক্টর একের পর এক ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মুমিন বলেন, কৃষি আবাদি জমি থেকে মাটি কাটা আইনবহির্ভূত। ভূমিদস্যুরা কৃষি ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমরা সকলেই সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভূমিদস্যুরা কৃষি জমি থেকে জমির টপ সয়েল (উর্বর) মাটি কেটে নিচ্ছেন। এর ফলে ওই জমিতে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। আমরা কৃষি জমি রক্ষায় কৃষকদেরকে সচেতন করে যাচ্ছি।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন ম্যানেজ-এর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, এটা ‘ভূয়া’ সত্য না।

Exit mobile version