Site icon দৈনিক এই বাংলা

পটুয়াখালীতে প্রাকৃতিক ছৈলা বন উজাড়: দখলদারদের দৌরাত্ম্য, প্রশাসনের নীরবতা

গোপাল হালদার, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লোহালিয়া নদীর তীরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ছৈলা বন এখন দখলদারদের আগ্রাসনের শিকার। স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী বনটিকে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে সাবাড় করেছে। সরকারি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে বন নিধন চলছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত দুই দশকে লোহালিয়া নদীর তীরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট পটুয়াখালী শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বনবিড়াল, শিয়ালসহ ছোট ছোট বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল এই বন। তবে সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করে বনের গাছ কেটে উজাড় করে দিচ্ছে।

বনটি নিয়ে ভূমি মালিকানা দাবি করলেও স্যাটেলাইট চিত্র ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। গুগল আর্থের ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৪ সালেও এখানে কোনো চর ছিল না। ২০১৪ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে চর পড়ে এখানে প্রাকৃতিক বন গড়ে ওঠে। এক দশক আগে লোহালিয়া নদীর কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার, যা বর্তমানে কমে ১৫৩ মিটারে নেমে এসেছে। নদী সংকুচিত হয়ে সৃষ্টি হওয়া ২৭২ মিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই বন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী বনের জমি নিজেদের বলে দাবি করে সেখানে আধুনিক করাত মেশিন বসিয়ে গাছ কেটে নিচ্ছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে ধাপে ধাপে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রথমে কিছু গাছ কাটা হলেও সরকারি কোনো বাধা না থাকায় ধীরে ধীরে এটি একটি বৃহৎ অপারেশনে পরিণত হয়। গত এক মাস ধরে প্রায় উৎসবমুখর পরিবেশে গাছ কাটা চলে, যা ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গাছ কাটা চললেও বন বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পর ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে বন বিভাগ অভিযান চালায়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করি। দুটি গাছ কাটার মেশিনসহ কুড়াল জব্দ করা হয়েছে। ৩৩৭ ঘনফুট গাছ সিস করা হয়েছে। ২.৩৭ হেক্টর এলাকায় গাছ কাটার প্রমাণ পেয়েছি। জমিটি নিয়ে বিরোধ থাকলেও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন থেকে গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। যারা গাছ কেটেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।”

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, “শহরের পাশে গড়ে ওঠা এই ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট রক্ষায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতিমধ্যে বনবিভাগ আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে। বনটি কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।”

Exit mobile version