Site icon দৈনিক এই বাংলা

পটিয়ায় ট্রাক প্রতি দৈনিক ৩-৪ হাজার টাকা নেন ক্যাশিয়ার নুরু

পটিয়া প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের পটিয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাত-দিন ফসলী জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে মাটি খেকোরা।

প্রশাসনের নজরে থাকলেও মাটি খেকো চক্রের সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় না আনায় দিনের পর দিন কৃষি জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি পাহাড় কেটে সমতল করে দিচ্ছে চক্রের সদ্যরা। আর এই চক্রদের কাছ থেকে প্রশাসনের ক্লিয়ারেন্সের কথা বলে ট্রাকপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকা নিচ্ছে নুরু ওরপে টোকেন নুরু। সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, অসাধু কিছু লোকজন শুষ্ক মৌসুম আসলেই নির্বিচারে শুরু করে দেন মাটি কাটা। অবিলম্বে পটিয়ায় পাহাড়ি এলাকা ও কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধ না করলে কৃষি জমির চরম ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য আর ধরে রাখা সম্ভব হবেনা বলে জানান। সর্বশেষ স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (৩০ ডিসেম্ভর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার হাঈদগাও ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবণ কুমার বিশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে একটি ট্রাক ও মো. সুমন(৪২) নামে এক চালককে আটক করে। পরে ট্রাক জব্দ করে ও ট্রাক চালক সুমনকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫/১ ধারা অনুযায়ী ৭দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।

সরেজমীন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হাইদগাঁও মল্লপাড়া গ্রাম, ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা গ্রাম, খরনা ইউনিয়ন, শ্রীমাই আমতল এলাকা এবং উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে রাতের আঁধারে টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকোরা। এছাড়া কেউ বাঁধা দিতে আসলে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতিও প্রদর্শণ করার অভিযোগও আছে। স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুম আসলেই বেপরোয়া হয়ে উঠে মাটি খেকোরা। কৃষি জমির ক্ষতিসাধন করে পরিবেশেরে ভারসাম্য নষ্ট করলেও প্রশাসন কার্যকরী ভূমিকা না রাখায় তাদের দমানো যায়না। তারা জানান, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তৎকালীন হুইপ সামশুল হকের ভাই নবাবের আগ্রাসন চলে আসছিল। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনরায় একটি গ্রুপ এই কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। এবিষয়ে চক্রের অন্যতম এক সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, টোকেন নুরু ও জনৈক এক সাংবাদিকের মাধ্যমে সবাইকে ম্যানেজ করে আমরা এ মাটি খাটতেছি। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, জমিতে ভালো ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলো উপরিভাগের মাটি। ওই মাটি প্রতিনিয়ত কেটে ফেলার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপর দিকে পাহাড় কেটে সমতল করে দেওয়ার ফলে পরিবেশেরও চরম বিপর্যয় হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি একবার কেটে নিয়ে গেলে তা পূরণ হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। মানবাধিকার ও পরিবেশ আইনজীবী জাফর হায়দার বলেন, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ আইনে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদÐ দেওয়ার বিধান রাখা হযেছে। চট্টগ্রাম পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় এর উর্বরতা হারিয়ে যায়। অন্যদিকে পাহাড় কেটে সমতল করে দেওয়ার ফলে পাহাড়ি গাছ কমে যাওয়ায় জলবায়ুর উপর চরম প্রভাব পড়ছে। এই বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্লাবণ কুমার বিশ^াস জানান, আমি এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেখানে যেখানে মাটি কাটাঁর খবর পেয়েছি সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিছু কিছু জায়গায় বেগ পেতে হচ্ছে। মাটি কাটার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওসি পটিয়াকে বলেছি। এখনো যদি কোথাও কৃষি জমি ও পাহাড় কাটার খবর পাই আমরা অভিযান পরিচালনা করব। সেক্ষেত্রে স্থানীয়রা আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে মাটি কাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।#৩০.১২.২৪

Exit mobile version