Site icon দৈনিক এই বাংলা

ব্যাংক ঋণে বিএনপি নেতার স্ত্রীর বিলাসী জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন নারী ব্যবসায়ী ফটিকছড়ি  বিএনপি নেতা বাহারের স্ত্রী ‘ নাজমী নওরোজ ‘। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে  ফটিকছড়ি আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাজমীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আজিম উল্লাহ বাহার।

অনুসন্ধানে জানা যায়,  নাজমী নওরোজ নামের ওই ব্যবসায়ী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন লন্ডন এবং কানাডায়। সম্পদ গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকা নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। সেই ঋণ সুদে আসলে এখন ২৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ব্যবসায়ী মহলে গুঞ্জন উঠেছে বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পালানোর পাঁয়তারা করছেন। ইতোমধ্যে অর্থঋণের একাধিক মামলায় তার সাজা হয়েছে এবং ওয়ারেন্ট আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে নওরোজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে দেখিয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩টি শাখা থেকে তিন দফায় ১৫১ কোটি টাকা ঋণ নেন এই নারী ব্যবসায়ী। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো চট্টগ্রামের আসকার দীঘির পাড়ে ইট অ্যান্ড ট্রিট নামের চটপটির দোকান, এর পাশেই ফিউশন ইটস নামের একটি রেস্তোরাঁ ও অপরটি লা এরিস্টোক্রেসি নামের রেস্তোরাঁ। যা তিনবার জায়গা বদল করে এখন নগরীর আগ্রাবাদে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লা এরিস্টোক্রেসি রেস্তোরাঁটির নামে নাজমী নওরোজ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আসকার দীঘির পাড়ের শাখা থেকে নিয়েছেন ৭০ কোটি টাকা, যা সুদাসলে ১১৭ কোটি টাকা হয়েছে। একই ব্যাংকের প্রবর্তক মোড় শাখা থেকে একই প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়েছেন আরও ৫৪ কোটি টাকা ঋণ। যা সুদাসলে ৯০ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। ব্যাংকটির চকবাজার শাখা থেকে নিয়েছেন ২৭ কোটি টাকা ঋণ। মূলত প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে এবং তাদের উপহার দিয়ে তিনি এই ঋন সুবিধা নিয়েছিলেন।

ব্যাংক সূত্র জানায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ২০১১ সাল থেকে লেনদেন শুরু হয় নাজমী নওরোজের। কিন্তু ২০২২ সালের আগে তিনি কোনো ঋণ পরিশোধ করেননি। ২০২২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা পরিশোধ করেননি।

শুধু ব্যাংকের টাকা নয়, তিনি অন্তত আরও ১৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ধার এবং ব্যবসায়িক পার্টনারশিপে বিনিয়োগ নিয়ে আর ফেরত দেননি।

চর পাথরঘাটার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাশেম সওদাগর  বলেন, ‘ তার সঙ্গে পার্টনারশিপে জাহাজ কেনার কথা বলে তিন কোটি টাকা নিয়ে আর ফেরত দেননি। তার কাছে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের চুক্তিপত্র রয়েছে।’

ভুক্তভোগীরা জানান, ব্যাংক এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন। তিনি সেখানে বাড়ি করেছেন। সেখানে তার এক ভাই এসব ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তার চলাফেরার জন্য আছে একটি টয়োটা ক্রাউন সেডান গাড়ি। নগরীর অভিজাত এলাকা নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে আছে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন লন্ডন ও কানাডায়। রেস্টুরেন্টের আয় দিয়ে এত বিশাল ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে নাজমী নওরোজ গণমাধ্যমে  কথা বলতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজমী নওরোজ ২০১২ সালে ৮১, শহিদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোড ঠিকানায় লা এরিস্টোক্রেসি নামে একটি রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন।

ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা জানান, লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ বরাদ্দের জন্য তিনি এই কৌশল নেন। অর্থের উৎস গোপন করা হয় এই প্রক্রিয়ায়। একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, বিদেশে অর্থ পাচার, ট্রাভেলার্স চেকে রূপান্তর, একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্যান্য শাখায় বিভিন্ন নামে অর্থ সরানোর জন্য এই কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়। নাজমী নওরোজ রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আয়-উন্নতি যাই হোক না কেন, তিনি বারবার শাখা বাড়ানো বা নাম পরিবর্তন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের কূটকৌশলের আশ্রয় নেন।

এ বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান (উত্তর) মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, ‘ নাজমী নওরোজের সঙ্গে আমরা ব্যাংক থেকেই যোগাযোগ করেছি। ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ দেখছি না। ঋণ আদায়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ঋণের টাকা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

Exit mobile version