Site icon দৈনিক এই বাংলা

হাজার বছর বয়স যে চিঠির

ইসলামের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে হাজার বছর ধরে বংশ পরম্পরায় যে চিঠি সংরক্ষণ করা হয়েছিলো। এই চিঠি হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর প্রতি লেখা।

হাজার বছরের সেই চিঠি সম্পর্কে  কিতাবুল মুসততরফ হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামিন ও তারিখে ইবনে আসাকির-এ বর্ণিত আছে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পৃথিবীতে আবির্ভাবের এক হাজার বছর পূর্বে ইয়ামানের বাদশাহ ছিলেন তুব্বে আউয়াল হোমাইরি। তিনি একবার নিজরাজ্য পরিভ্রমণে বের হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল বার হাজার আলেম ও হেকিম, এক লাখ বত্রিশ হাজার অশ্বারোহী এবং এক লাখ তের হাজার পদাতিক সৈনিক।
এমন শান শওকতে বেরিয়েছিলেন যে, যেখানেই গেছেন, এ দৃশ্য দেখবার জন্য চারদিক থেকে লোক এসে জমায়েত হয়ে যেতো। ভ্রমণ করতে করতে যখন মক্কা নগরীতে পৌঁছলেন, তখন তার এ বিশাল বাহিনীকে দেখবার জন্য মক্কার কেউ এলেন না। বাদশাহ আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং উজিরে আজমকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। উজির জানালেন, এ শহরে এমন একটি ঘর আছে যাকে বাইতুল্লাহ বলা হয়। এ ঘর ও এ ঘরের খাদেমরা এবং এখানকার বাসিন্দাদের পৃথিবীর সমস্ত লোক সীমাহীন সম্মান করে। আপনার বাহিনী থেকে অনেক বেশি লোক নিকটবর্তী ও দূর-দূরান্ত থেকে এ ঘর জিয়ারত করতে আসে এবং এখানকার বাসিন্দাদের সাধ্যমত খেদমত করে চলে যায়।তাই আপনার বাহিনীর প্রতি তাঁদের কোনও আকর্ষণ নেই। এটা শুনে বাদশাহ রাগান্বিত হলেন এবং কসম করে বললেন, আমি এ ঘর ধূলিস্যাৎ করে দেবো এবং এখানকার বাসিন্দাদের হত্যা করবো।

এটা বলবার সঙ্গে সঙ্গে বাদশাহর নাকমুখ ও চোখ থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো এবং এমন দুর্গন্ধময় পুঁজ বের হতে লাগলো যে ওর পাশে বসবার কারুর সাধ্য হলো না । এ রোগের নানা চিকিৎসা করা হলো। কিন্তু কোনও কাজ হলো না। বাদশাহর সফরসঙ্গী ওলামা একরামের একজন আলেমে রব্বানী নাড়ী দেখে বললেন, রোগ হচ্ছে আসমানি কিন্তু চিকিৎসা হচ্ছে দুনিয়াবি। হে বাদশাহ মহোদয়! আপনি যদি কোনও খারাপ নিয়ত করে থাকেন, তাহলে অনতিবিলম্বে সেটা থেকে তওবা করুন। বাদশাহ মনে মনে বায়তুল্লাহ ও এর খাদেমদের সম্পর্কে যে-ধারণা করেছিলেন তা থেকে তওবা করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্ত ঝরা ও পুঁজ পড়া বন্ধ হয়ে গেল । আর সেই খুশিতে বাদশাহ বায়তুল্লাহতে গিলাফ চড়ানো এবং শহরের প্রত্যেক বাসিন্দাকে সাতটি করে সোনার মুদ্রা ও সাত জোড়া রেশমি কাপড় নজরানা দিলেন।

অতঃপর মক্কা থেকে মদিনা-মনোয়ারা গেলেন এবং সফরসঙ্গী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা আসমানি কিতাবসমূহ সম্পর্কে জ্ঞানী ছিলেন, তাঁরা সেখানকার মাটি শুকে ও পাথর পরীক্ষা করে দেখলেন যে, শেষ নবীর হিজরতের যে স্থানের যেসব আলামত তাঁরা পড়েছিলেন এ জায়গার সঙ্গে এর মিল দেখলেন। তখন তাঁরা সংকল্প করলেন, তাঁরা এখানে মৃত্যুবরণ করবেন এবং এ জায়গা ত্যাগ করে কোথাও যাবেন না। তাঁরা ভাবলেন, কিসমত যদি ভালো হয় তাহলে কোনও এক সময় শেষ নবী স. তাশরিফ আনলে নিশ্চয়ই ল সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ হবে। অন্যথায় কোনও এক সময় তাঁর পবিত্র জুতার ধূলি উড়ে এসে তাঁদের কবরের ওপর নিশ্চয়ই পড়বে যা তাঁদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট। এটা শুনে বাদশাহ সেসব আলেমদের জন্য চারশত ঘর তৈরি করালেন এবং সেই বড় আলেমে রব্বানীর ঘরের কাছে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্যে দোতলা বিশিষ্ট একটি উন্নত ঘর তৈরি করালেন এবং বলেন, যখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরিফ আনবেন তখন এ ঘর যেন তাঁর আরামের জায়গা হয়।
ওই চারশত আলেমদের যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য করলেন এবং বললেন আপনারা এখানে স্থায়ীভাবে থাকুন। অতঃপর সেই বড় আলেমে রব্বানীকে একটি চিঠি দিলেন এবং বললেন, আমার এ চিঠি শেষ নবী স. এর খেদমতে পেশ করবেন। যদি আপনার জিন্দেগীতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব না ঘটে, তাহলে আপনার বংশধরকে ওসিয়ত করে যাবেন যেন আমার এ চিঠিখানা বংশানুক্রমে হেফাজত করা হয়। যাতে শেষ পর্যন্ত শেষ নবী স. এর খেদমতে পেশ করা হয়। এরপর বাদশাহ দেশে ফিরে গেলেন । এইল চিঠি এক হাজার বছর পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পেশ করা হয়েছিল। যেভাবে চিঠি পেশ করা হয়েছিল এবং চিঠিতে যা লেখা ছিল, অধম বান্দাহ তুব্বে আউয়াল হোমাইরা এর পক্ষ থেকে শফিউল মুজনাবিন সাইয়েদুল মুরসালিন মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি- হে আল্লাহর হাবিব! আমি আপনার ওপর ঈমান আনছি এবং আপনার প্রতি যে কিতাব নাজিল হবে সেটার ওপর ঈমান আনছি আর আমি আপনার দীনের ওপর আস্থাশীল। অতএব যদি আমার আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাহলে খুবই ভালো ও সৌভাগ্যের বিষয় হবে। আর যদি আপনার সাক্ষাৎ নসিব না হয়, তাহলে আমার জন্য মেহেরবানি করে শাফায়াত করবেন এবং কিয়ামত দিবসে আমাকে নিরাশ করবেন না। আমি আপনার প্রথম উম্মত এবং আপনার আবির্ভাবের আগে আপনার বায়াত করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং আপনি তার সত্যিকার রসূল।

ইয়ামানের বাদশাহর এ চিঠি বংশানুক্রমে ৪০০শত ওলামায়ে একরাম এর পরিবারের মধ্যে প্রাণের চেয়েও অধিক যত্নসহকারে রক্ষিত হয়ে আসছিল । এভাবে এক হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে গেল উল্লেখিত ওলামায়ে কিরামের সন্তান-সন্ততির সংখ্যা বেড়ে মদিনার অধিবাসী কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। এই চিঠি ও ওসিয়ত নামা ও সে বড় আলেমের রব্বানীর বংশধর এর মধ্য হাত বদল হতে হতে হযরত আবু আইউব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর হাতে এসে পৌঁছে। তিনি এটা তার গোলাম আবু লায়লার হেফাজতে রাখেন ।

যখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনা মনোয়ারার প্রান্তসীমায় পদার্পণ করেন, মদিনা থেকে যখন তাঁর উটের দৃষ্টিগোচর, তখন মদিনার সৌভাগ্যবান লোকেরা মাহবুবে আল্লাহর অভ্যর্থনার জন্য নারায়ে রেসালতের স্লোগান দিয়ে দলে দলে এগিয়ে গেলেন, অনেকে ঘর বাড়ি সাজানো ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করবার কাজে নিয়োজিত হলেন, অনেকে দাওয়াতের আয়োজন করতে লাগলেন। সবাই এটাই অনুনয়-বিনয় করেছিলেন যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরিফ রাখুন। হুযুর সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম ফরমালেন যে, আমার উটের লাগাম ছেড়ে দাও এবং এটা যে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বসে যাবে সেটাই হবে আমার অবস্থানের জায়গা। উল্লেখ্য, ইরানের বাদশাহ তুব্বে আউয়াল হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যে দোতলা বিশিষ্ট ঘর তৈরি করেছিলেন সেটা তখন হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর অধীনে ছিল। আর উটটিও সে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। লোকেরা আবু লায়লাকে গিয়ে বললেন, ইয়ামানের বাদশাহর সে-চিঠি হুজুরকে দিয়ে এসো। অতঃপর সে যখন হুজুরের সামনে এসে হাজির হলো তাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি আবু লায়লা। এটা শুনে আবু লায়লা আশ্চর্য হয়ে গেল। পুনরায় ফরমালেন যে, আমি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, ইয়ামানের বাদশাহর সেই চিঠি যা তোমার হেফাজতে আছে, সেটা আমাকে দাও। অতঃপর আবু লায়লা চিঠিটা হুজুরকে দিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিঠি পাঠ করে ফরমালেন, বাদশাহ তুব্বা আউয়ালকে অশেষ মুবারকবাদ।

Exit mobile version