Site icon দৈনিক এই বাংলা

ফটিকছড়িতে ‘ ইরান ঝড় ‘

তানভীর আহমেদ :::

একদিন পরেই চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় উপজেলা ফটিকছড়ির নির্বাচন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছে দুই প্রার্থী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা  বখতিয়ার সাইদ ইরান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  নাজিম উদ্দীন মুহুরী। ভোটের লড়াইয়ে প্রস্তুত আট প্রার্থী। 

চেয়ারম্যান পদে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরী (মোটরসাইকেল) প্রতিক এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ছাত্র নেতা মুহাস্মদ বখতেয়ার সাঈদ ইরান (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা (প্রজাপতি) ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন আক্তার নুপুর (ফুটবল) নিয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন (বই) , ফটিকছড়ি পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জসিম উদ্দিন (টিউবওয়েল), ও নাজিমুদ্দিন সিদ্দিকী (চশমা) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

রবিবার  ছিল প্রচারণার শেষ দিন। বিরামহীন প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের মন জয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায় প্রার্থীরা। সারাদিন বৃষ্টির মাঝে ছাতা মাথায় নিয়ে প্রার্থীরা প্রচারনা চালাতে দেখা যায়। ভোটারদের মন জয়ে গণসংযোগ ও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুড়েন প্রার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা ও আত্মীয় স্বজনরা প্রচারণা চালায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমও পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহবান করছে।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই মাঠে আছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভোটাররা শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই দুই চেয়ারম্যান  প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারবেন, তা নিয়ে এলাকায় আলোচনা রয়েছে। তবে ভোটের মাঠে অপেক্ষাকৃত নবীন ও পরিছন্ন ইমেজ রয়েছে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বখতিয়ার সাইদ ইরানের।

অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান  প্রার্থী হিসেবে গতবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে যাওয়া প্রার্থী নাজিম উদ্দীন মুহুরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন বলয়ের নেতারা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব ভোটের মাঠে বখতিয়ার সাইদ ইরানের প্রচারণায় ব্যতিব্যস্ত ছিলেন শুরু থেকে। শনিবার থেকে হেভিওয়েট  আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান যুক্ত হয়েছেন একই শিবিরে। তিনি কাঞ্চননগরে আনারস প্রতীকের সমর্থনে পথসভা করেছেন।

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে অপহরণের পর ফটিকছড়িতেই হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পুলিশ তার লাশ উপজেলার কাঞ্চন নগরের গহিন অরণ্য থেকে উদ্ধার করে। এরপর র‌্যাব গঠন, অপারেশন ক্লিন হার্ট এবং পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের সাহসী ভূমিকায় কয়েকটি বিশেষ অভিযানে একে একে সব বড় বড় সন্ত্রাসী ধরা পড়ে। আবার কেউ কেউ বিদেশ চলে যায়। এরপর আস্তে আস্তে শান্ত হতে থাকে এ উপজেলার পরিবেশ। কিন্তু গত কয়েক বছরে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শান্ত এ জনপদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নব্বই শতাংশ নেতারাই অবস্থান নিয়েছেন ইরানের পক্ষে। এছাড়া বারোটি ইউনিয়নের সভাপতি, একটি পৌরসভার মেয়র ইরানের পক্ষে সরব আছেন। ইরানের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পরিছন্ন ইমেজকে পুঁজি করে নির্বাচনী বৈতরণি পাড়ি দিতে চায় আনারসের সমর্থকরা।

অন্যদিকে, একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র অবস্থান নিয়েছেন নাজিম উদ্দীন মুহুরীর পক্ষে। ইতিমধ্যে বিরোধী ঝড়ের কবলে পড়ে সংবাদ সম্মেলন করে  সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন নাজিম উদ্দীন মুহুরী।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদে এগিয়ে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে মু: বখতেয়ার সাইদ। যদিও স্থাবর সম্পদের কোন কিছুই নেই উল্লেখ্য করেন হলফনামায়।

ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (মোটরসাইকেল)  গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থী ছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হলফনামায় নিজেকে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত উল্লেখ করেছেন।

একসময়ের সন্ত্রাসের জনপদখ্যাত উপজেলা ফটিকছড়িতে সাধারণ মানুষ সন্ত্রাস সাথে জড়িত থাকার অতীত ইতিহাসকে নেতিবাচক হিসেবে নিতে পারে। তাই পরিছন্ন ও শিক্ষিত প্রার্থীর কদর রয়েছে সব ইউনিয়নে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক উত্তরজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বখতিয়ার সাঈদ ইরান বলেন, ‘২১ মে আমাকে আনারস মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করতে ভোটাররা প্রস্তুত । ভবিষ্যতে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এলাকাবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি  সুন্দর, শান্ত, স্মার্ট এবং গ্রিন ফটিকছড়ি উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।’

উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী,
ফটিকছড়ি উপজেলা মোট ভোটার সংখ্যা ৪লক্ষ ৬৪হাজার ৬শত ৭ জন। পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ৪৫হাজার ৯শত ৩৮ জন।মহিলা ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ১৮হাজার ৬শত ৬৭ জন। হিজরা সংখ্যা ২ জন।
মোট ভোট কেন্দ্র ১৪২টি। বোথ ১০০২টি।প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১৪২ জন।সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১০০২ জন। পুলিং কর্মকর্তা ২০০৪ জন। RAB ১পাল্টুন, বিজিবি ৬পাল্টুন, পুলিশ ১০০০, আনসার ২০০০, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-২৬ জন, বিজিবি স্টাইকিং ফোর্সেস, পুলিশ স্টাইকিং ফোর্সেস মাঠে কাজ করবেন।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এর জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর বলে জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, জনে জনে ভোট হবে। কোন প্রকার বিশৃংখলা মেনে নেয়া হবে না। ভোটারদের নির্বিঘ্ন করতে আইন শৃংখলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সততার সাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

ইতিমধ্যে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মু. বখতিয়ার সাইদ ইরানের পক্ষে প্রচারণামূলক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করায় দুই প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা হলেন জাহানপুর আমজাদ আলী আবদুল হাদী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো. মফিজুর রহমান এবং ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরাম উল্লাহ।

Exit mobile version