Site icon দৈনিক এই বাংলা

বন্দরে ভুয়া কাগজে কাপড়ের চালান খালাস

নাদিরা শিমু, চট্টগ্রাম :::

চট্টগ্রাম বন্দরে কাপড় ভর্তি একটি পণ্যের চালান জাল কাগজে বের করে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। চীন থেকে আমদানি করা এই চালাটি চট্টগ্রাম বন্দরের গেট পার হয়ে চলে যায় হালিশহরের তাসফিয়া কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  চট্টগ্রাম বন্দরের  সিসিআর ৫ নম্বর ইয়াড থেকে ( কনটেইনার নং HASU –5012464*40) এর মূল্যবান বোরকার কাপড় দুটি কাভার্ড ভ্যান করে এনসিওয়াই গেট দিয়ে বের হয়ে যায়।  CMTA=11-1479 এবং DMTA=18 -2360  দিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মাহমুদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল  অনুকূলে জাল ডকুমেন্ট এর মাধ্যমে নিরাপত্তা কর্মীদের সহযোগিতায় পাচার হয় পণ্য ভর্তি ট্রাক । পরবর্তীতে হালিশহর তাসফিয়া কমিটির সেন্টারের সামনে থেকে  গাড়িগুলো আটক করে পুনরায় বন্দরে ফেরত আনা হয়।

সুত্রমতে,  এই চালানে ২৮ টন বোরকার কাপড়, সোফার কাপড়, পর্দা – এসব পণ্য ছিলো। জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত পঞ্চাশ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে ।চীন থেকে আসা এ চালানটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খালাসের জন্য নথি দাখিল করে আমদানিকারকের প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মাহমুদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

নথি অনুযায়ী, মাহমুদ ট্রেডের জেটি সরকার পদে কর্মরত রবিউল ইসলাম চালানটি খালাসে কাগজপত্র দাখিল করেছেন। চালানটি জব্দ করার পর রবিউল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

নিরাপত্তা গেইট অতিক্রম করে চালানটি ট্রাকে করে হালিশহরের তাসফিয়া কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত চলে যায়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এনামুল হকের তত্বাবধানে ভুয়া চালান প্রদর্শন করে ট্রাক দুটি বন্দরের নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করে।

সুত্রমতে,  গত ২০ শে ফেব্রুয়ারী বন্দরের ইয়াড হতে চল্লিশ ফিটের  কনটেইনার ভর্তি পণ্য  (HASU=5012464*40)  দুটি কভার্ড ভ্যান লোড করা হয়। কনটেইনারটি কোন ধরনের ডকুমেন্ট ছাড়া কিপ ডাউন করা হয়েছিল।  একটি সংঘবদ্ধ কনটেইনার পাচারকারী চক্র চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে যার নেতৃত্ব রয়েছেন  ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা পরিদর্শক এনামুল হক।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গাড়ি দুইটি এনামুল হকের গেট দিয়ে তার উপস্থিতিতে পাচার হয়েছে। তাছাড়াও যেই ইয়ার্ড হতে এই মালামাল বোঝাই করা হয়েছে সেই ইয়ার্ডেও সিসিটিভি কাভারেজ আছে।

উল্লেখ, এরআগে গুপ্তখাল হতেও একই পদ্ধতিতে এই কন্টেইনার পাচারকারী চক্র বেশ কয়েকটি কন্টেইনার পাচার করে নিয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়াতে কনটেইনার পাচারের ঘটনা পূনরায় ঘটলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাচার হওয়া পণ্য ভর্তি ট্রাক আটক করা হলেও সুকৌশলে জড়িতদের বাঁচাতে তৎপর রয়েছে বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা৷  ঘটনা তদন্তের পরিবর্তে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

ঘটনা জানাজানি হলে ২২ শে ফেব্রুয়ারী  বন্দরের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিদর্শক এনামুল হককে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রশাসন স্বাক্ষরিত এক চিঠি এনামুল হককে সাসপেন্ড করার বিষয়টি জানানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান নিরাপত্তা বিভাগের প্রশাসন কনটেইনার পাচারকারী সিন্ডিকেটের পরামর্শে এবং নির্দেশনায় চলে। এতে নিরাপত্তা বিভাগ তথা চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ভূলুন্ঠিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এরআগে আইপি জালিয়াতি করে সম্প্রতি অবৈধভাবে বিদেশি মদের চালান আমদানি করে জালিয়াতচক্র। এরমধ্যে মদবাহী দুটি কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস হয়। বাধ্যবাধকতা থাকলেও কনটেইনার দুটি স্ক্যানিং করা হয়নি। জাল স্ক্যানিং দেখিয়ে বন্দর থেকে বের করে নেওয়া হয় কনটেইনারগুলো। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরে দ্রুত র্যাবের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে মদভর্তি কনটেইনার দুটি জব্দ করে। বিষয়টি গণমাধ্যমের খবরে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়।

এইবাংলা /তুহিন

Exit mobile version