Site icon দৈনিক এই বাংলা

রাউজানে জুমার নামাজ থেকে ডেকে পিটিয়ে যুবককে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের  হাজীপাড়া এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) মোহাম্মদ   মুছা (৪৫) স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে ইকবাল বাহিনীর হাতে মারধরের শিকার হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের ভগ্নিপতি মাসুদ উদ্দিন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে,  মুছা স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলে তাকে বেদম প্রহার করা হয়।  মসজিদে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল এর নেতৃত্বে ১০ থেকে -১২ জন যুবক তার উপর হামলা করে এবং তাকে বেধড়ক  পিটুনি দেয় ।  পিটুনি খেয়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘ মুসা বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী । বিগত ১৫ বছর যাবৎ সে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কারনে এলাকা ছাড়া । সে ওমান প্রবাসী এবং দেশে আসলে সে হাটহাজারীতে থাকতো । ওমান বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সে। আজ নিজ এলাকায় জুমার নামাজ পড়তে আসলে ইকবালের নেতৃত্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে মসজিদের ভিতরে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমরা জানতে পেরেছি এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ডাক্তার এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চালানোর চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দল । ‘

তবে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, ” পূর্ব থেকে তার হার্টের সমস্যা ছিল এবং হার্ট এ্যটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার এর জন্য বিএনপি এটিকে হত্যাকান্ড বলছে “।

মুছার ভাই মোহাম্মদ ইউছুপ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমি রাউজান হাজীপাড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষ করে পাশে থাকা বাবার কবর জিয়ারত শেষ করি। এ সময় হঠাৎ দুই যুবক এসে আমার ভাইকে ডেকে মসজিদের পাশে টয়লেটের সামনে নিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় দুই যুবকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন। তাদের নির্যাতনে আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ ওমানে মুছা বিএনপির রাজনীতি করতেন বলে জানান তার ভাই ইউছুপ।

মৃতের স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) জাহেদ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি রাত আটটা পর্যন্ত  সাড়া দেন নি। সাড়ে আটটার দিকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদ হোসেন।

তিনি বলেন, মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ওই ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে পড়ে গিয়েছিল। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি ওই ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এদিকে,  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র মতে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও মুছার পরিবারের উপর মামলা না করার চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে।  হার্ট অ্যাটাকে মুছার মৃত্যু ঘটেছে এমন তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে রাউজান থানা। প্রসঙ্গত, রাউজান থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদ হোসেনের বিরুদ্ধে তার পূর্বের কর্মস্থল জোরারগঞ্জে একটি হত্যাকান্ডকে গণপিটুনি হিসেবে চালিয়ে দিয়ে মামলার এফআরটি দেবার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

 

এইবাংলা /তুহিন

Exit mobile version