Site icon দৈনিক এই বাংলা

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিষিদ্ধ বেটিংয়ের রমরমা ব্যবসা

মোহাম্মদ পারভেজ 

সৃষ্টির শুরু থেকেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি থাকে মানুষের আগ্রহ বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় অনলাইন বেটিংয়ে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের একটি প্রজন্মকে। বেটিং ও গ্যাম্বলিংয়ের নীরব এক ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে পুরো দেশে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত, সমাজের প্রতিটি শ্রেণিতেই আজ ছড়িয়ে পড়েছে নিরব ঘাতক এই বেটিং সাইটগুলো। কেউ সরাসরি খেলাতে বাজি ধরছেন, কেউবা খেলেন ক্যাসিনোর বিভিন্ন গেম।

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে বেটিং সাইটগুলোর অর্থ লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হল বাংলাদেশের নামিদামি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো। এভাবে মহামারির মতো ছড়িয়ে পরার পরও মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা বেটিং সাইটগুলোর কড়াল গ্রাস রুখতে প্রশাসনকে দেখা যায় নামমাত্র ভূমিকা পালন করতে।

এ বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো জানান, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা সরাসরি তো এর সাথে যুক্ত না। এখন আপনার ভাইকে আপনি টাকা দিলেন, সেই টাকা দিয়ে উনি অবৈধ কাজ করলো। তাতে কি আপনি দোষি হবেন?আমরা সবসময়ই এসব অবৈধ লেনদেন মনিটর করছি। আমাদের একটা টিমই রয়েছে এগুলো মনিটরিংয়ের জন্য। আমরা সবসময়ই কোনো সন্দেহজনক লেনদেন দেখলে বা কোনো অভিযোগ অথবা কোনো প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

যদিও প্রশাসন দাবি করেছেন এসকল সাইটের মোবাইল ব্যাংকিং ও অবাধ বিচরণ রুখতে এ সদা তৎপর ও সদা সচেষ্ট।এগুলোর ব্যপ্তি রুখে দিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলোর সবই তারা ইতোমধ্যেই নিয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় বেশকিছু বেটিং ওয়েবসাইট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের (সিআইডি) মুখপাত্র আজাদ রহমান বলেন, আমরা সবসময়ই এগুলোকে মনিটরিংয়ে রেখেছি। কিছুদিন আগেই আমরা এমনই একটি সাইটের চার মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেফতার করেছি। এছাড়া পেমেন্ট গেটওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আমরা অনলাইন বেটিং সাইটের সঙ্গে জড়িত থাকায় আইনের আওতায় এনেছি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা সদা তৎপর রয়েছি এই বিষয়টিতে। যখনই যাকে জড়িত পাচ্ছি তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এটি আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা ইতোমধ্যেই এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইটের সকল ধরণের কার্যক্রম বিটিআরসির মাধ্যমে বন্ধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশ থেকে সেই সব ওয়েবসাইটে আর প্রবেশই করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে তাদের সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটিও এই প্রক্রিয়ার ভেতর আনা হবে শীঘ্রই। আমরা যখনই কোনো অভিযোগ বা তথ্য পাই, দ্রুততম সময়ের ভেতর সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই।

সাইটগুলোতে সাধারণ ও প্রচলিত ধারায় প্রবেশ না করতে পারলেও শুধুমাত্র ভিপিএন নামক ছোট্ট একটি অ্যাপস স্মার্টফোনে ইন্সটল করে নিলেই কোনো বাধা ছাড়াই প্রবেশ করা যাচ্ছে। বিটিআরসির দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া সেসব ওয়েবসাইটগুলোতে। একই সাথে আগের মতোই সকল কার্যক্রমও পরিচালনা করা যাচ্ছে অবাধেই। এ যেন সামনের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে পেছনের দরজা খুলে রাখার মতো অবস্থা। প্রতিটা বেটিং সাইট আর্থিক লেনদেনের জন্য বেশ কিছু এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এইসব এজেন্টদের কাজ হলো জুয়াড়িদের টাকা তাদের সাইটে থাকা একাউন্টে ট্রান্সফার করা। অনেকেই আবার নিজেদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ তাদের বেটিং একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেন। এই টাকাগুলো বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেটের মতো দেশের ডিজিটাল লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। দেরারসে একদম ওপেন সিক্রেটের মতোই চলছে দেশের এ সকল গেটওয়ে ব্যবহার করে অবৈধ কার্যক্রম। যেহেতু দেশের বহুল প্রচলিত অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে বেটিং সাইটগুলো একাউন্ট হোল্ডারদের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করে, তাই বেটিং সাইটগুলোর সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগের তীর ছুটে আসাটাই অতি স্বাভাবিক।

বেটিং সাইটগুলো তাদের লেনদেনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অনলাইন লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম নগদ, বিকাশ, ইউক্যাশ, রকেট, উপায়ের মতো অনলাইন ট্র্যালনজেকশন গেটওয়ে দিয়ে। একটি পরিসংখ্যান বলছে প্রতিদিন এইসব অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে বেটিংয়ের জন্য লেনদেন হয় অন্তত কয়েক কোটি টাকা। যার পুরোটাই কিনা অবৈধ। দেদারসে দেশের টাকা সবার চোখের অলক্ষ্যে চলে যাচ্ছে বিদেশে, যেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সাইটগুলো।

এই বাংলা/এমপি

Exit mobile version