Site icon দৈনিক এই বাংলা

ট্রেন পুড়ানোর রাজনীতির বলি চার নিরীহ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :::

জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মঙ্গলবার বিএনপির ডাকা হরতালের সকালে নেত্রকোণা থেকে এসে ঢাকায় ঢোকার পথে অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। তেজগাঁও স্টেশনে এসে থামা ট্রেনটির তিনটি বগি ভস্মিভূত হয়েছে। একটি বগি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক মা, তার শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ।

নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী মোহনগন্জ এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে  তেজগাঁও স্টেশন এসে পৌছুলে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আরও অন্তত আটজন আহত হয়েছে।নেত্রকোনার নাদিরা ও নাদিরার দুই ছেলে ইয়াসিন (৩) ও ফাহিম (৮) এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন। 

ট্রেনের যাত্রী সাহাবুদ্দিন জানান,  ‘ বিমানবন্দর থেকে কাকলির মধ্যবর্তীস্থানে আসার পরপরই ট্রেনের একটি বগিতে আগুনের কুন্ডলী দেখা যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ‘

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মা-ছেলেসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, ট্রেনটি নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় আসছিল। বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর যাত্রীরা পেছনের বগিতে আগুন দেখতে পান। এরপর চালক ট্রেনটি ‘বিপদ সংকেত’ দিয়ে  তেজগাঁও স্টেশনে থামান। 

এই ঘটনায় হতাহতদের খোঁজ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন তিনি। তার ভাষায়, এটা ‘দিবালোকের মত স্পষ্ট’।

হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতার বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান  বলেছেন, “এসব তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। বিদেশি নেতাদের নির্দেশে তাদের দেশীয় এজেন্টরা এসব কাজ করছে।”

তিনি বলেন, ভোর ৫টার দিকে ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলস্টেশন অতিক্রম করার পর কাকলীর কাছাকাছি এলে ‘জ’ বগির যাত্রীরা আগুন দেখতে পান। হুড়োহুড়ি করে তারা কেউ জানালা দিয়ে, কেউ দরজা দিয়ে নেমে যান।

এদিকে, ট্রেনে আগুন দেবার ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করেছে পিবিআই ( পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ।পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রমাণ করে যে এটি একটি নাশকতামূলক কাজ। ‘আমরা সন্দেহ করছি যে তিন ব্যক্তি বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের তিনটি বগিতে উঠেছিলেন তারা পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আমরা স্পষ্ট বলতে পারব।’

হরতালের ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ‘মানবতাবিরোধী কাজ’ আখ্যা দিয়ে ‘নিরপেক্ষ’ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি।

এ ঘটনার পেছনে ‘মহল বিশেষের প্রশ্রয়’ রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাদের আন্দোলন থেকে ‘জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে’ এটি একটি ‘কূটচাল’ বলে মনে করছেন তারা।

 বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আজ ভোররাতে যারা তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজন যাত্রীর প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দিল, তারা নিঃসন্দেহে মানুষ নামের কলঙ্ক। মহল বিশেষের প্রশ্রয় ব্যতিরেকে এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, এর আগে দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলপথে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর সোয়া ৪টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৫) নিহত হন। ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

 

Exit mobile version