Site icon দৈনিক এই বাংলা

দুর্নীতি-অনিয়মে অব্যস্হাপনায় ডুবতে বসেছে বিআরটিসি পর্ব-১

মোল্লা নাছির উদ্দীনঃ দুর্নীতি-অনিয়মে, অব্যস্হাপনায় ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রয়ত্ব যোগাযোগ-পরিবহন সংস্হা বিআরটিসির  বরিশাল ডিপো।দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে এ অন্চলের সরক পরিবহনে আধুনিকতার নতুন নতুন সংস্করন যুক্ত হলেও রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে সেই মান্দাতার যুগেই।

এখন পর্যন্ত নেয় নি টিকে থাকার জন্য নতুন কোন যুগোপযোগী পরিকল্পনা। পুরনো টিসি ও ডিসি বাস দিয়ে চালানো হচ্ছে রুটগুলো। নিয়ম নীতি লংগন করে সরকারি চাকুরীতে থাকা চালকদের বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির বাস দেয়া হচ্ছে সাব লীজে।

বাড়ি বরিশালে হলেও  জালজালিয়াতি করে গোপালগঞ্জের ঠিকানা দেখিয়ে চাকিরী নিয়েছে অনেকে । এমনও অনেকে আছে যারা বছরের পর বছর বরিশাল ডিপোতে চাকুরী করে যাচ্ছে বরিশাল ডিপোতে।

ক্ষমাশীল দলের নাং ভাংগিয়ে হরিলুটের আসর বসিয়ে তেল চুরিসহ সরকারি অর্থ তসরুপের মহোৎসব  বসিয়েছে একাধিক কর্মকর্তা, চালক ও কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর অধীনে বাসের চালক পদে রয়েছেন হাফিজ।তার   জন্ম ও পৈত্রিক বাড়ি বরিশাল । নিজ জেলার নাম গোপন করে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হিসেব বিআরটিসিতে চালক পদে চাকুরী নিয়ে বরিশাল ডিপোতে কর্মরত রয়েছেন ।

তথ্য গোপন করে চাকুরী নেয়া ড্রাইভার হাফিজ চাকুরীর শুরু থেকেই বরিশাল ডিপোতে কর্মরত রয়েছেন। বিষয়টি সে নিজেই স্বীকার করেছে। তবে তার জায়গা জমি গোপালগঞ্জে রয়েছে বলেও জানায়।হাফিজের পিতা আব্দুল মোতালেব বিআরটিসির বরিশাল ডিপোতে লেবার সর্দার।

তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে এবং সে জানায় এমন অনেকেই আছে যারা ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে চাকুরী নিয়েছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, হাফিজের মতই আরেকজন বিআরটিসির ড্রাইভার ফেরদাউস ।তিনিও প্রকৃত ঠিকানা  গোপন করে গোপালগঞ্জের ঠিকানা দেখিয়ে বিআরটিসির ড্রাইভার পদে চাকুরী নেন।  চালক পদে চাকুরী নিয়ে এখন তিনি বরিশাল ডিপোর এসি মিস্ত্রী।

ফেরদাউসের বিরুদ্ধে ভুয়া ভাউচার দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। চালকের থেকে এসি মিস্ত্রি পদে দায়ীত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায় বহু অভিযোগ।

এসির যন্ত্রাংশ না কিনে  বিকল বাস থেকে সচল বাসে আর সচল বাস থেকে বিকল বাসের এসির যন্ত্রাংশ খুলে মেরামত করে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে নতুন যন্ত্রাংশের ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর।

ঠিকানা গোপন করা বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার জন্ম বরিশালে তবে গোপালগঞ্জে জায়গা জমি থাকায় সেখানের ঠিকানা দিয়ে চাকুরী নিয়ে বরিশাল ডিপোতে কর্মরত রয়েছি এটা কোন দোষের কী।

তার বাড়ি বরিশাল এ কথা স্বিকার করে বলেন, বরিশালে আমার বাসা জিয়া সড়কে। আমরা বরিশালের স্থানীয় বাসিন্দা।

২০১৮ সাল থেকেই বরিশালে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান।এছাড়াও এ বাস ডিপোতে ভূয়া ঠিকানায় চাকুরী নিয়ে বছরের পর চাকুরী করে যাচ্ছেন বিপ্লব গাজী।

বিপ্লব গাজী পদে ড্রাইবার হলেও তিনি বিআরটিসির বরিশাল ডিপোতে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ইন্সটেক্টর পদে রয়েছেন বলেও জানা যায় ।তার বিরুদ্ধ রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ।দীর্ঘদিন যাবৎ একই ডিপোতে থাকার ফলে রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন।

সে একজন কট্টর মদ্যপ তাই তাকে ডোপ টেস্টের দাবী করেছেন ডিপোর কর্মচারীরা।

তার বিরুদ্ধে প্রশিক্ষন কেন্দ্র প্রশিক্ষনরত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ২ থেকে চার হাজার টাকা অবৈধ ভাবে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

বরিশাল বিআরটিসি প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর বোরহানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু অভিযোগ।তিনি চাকিরী নিয়েছেন তথ্য গোপন করে। একটানা  দীর্ঘ দশ বছর চাকুরী করছেন এ ডিপুতে।

গোপালগঞ্জের দাপট দেখিয়ে প্রশিক্ষনরত শিক্ষার্থীদের থেকে অবৈধ ভাবে টাকা নিচ্ছেন বিআরটিএর নামে। যারা নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে পারে তাদেরকেই দেন ড্রাইভিং লাইসেন্স।নতিবা ফেল অনিবার্য।

আজমল ড্রাইভারের নামেও আছে একই ধরনের বহু অভিযোগ।বিআরটিসি বরিশাল ডিপো যেন দূর্নীতির এক নিরাপদ আখরা।

বিআরটিসির ড্রাইভার আজমলের নামেও রয়েছে নানা অভিযোগ তাকে  সাসপেন্ডও করা হয়।সাসপেন্ড করার পরেও আজমল ড্রাইভার রবিউলের নামে বাউফল,নলছিটি ও তালতলী রুটে বিআরটিসির বাস সাব লীজ নিয়ে পরিচালনা করছেন।

সাসপেন্ড হওয়ার পরও তার দাপটে নির্যাতন-হয়রানীর শিকার হচ্ছেন সাধারন চালকরা।

নিয়ম-নীতির কোন তোয়াক্কা না করে  বিআরটিসির বরিশাল ডিপোর বাইরের কাউন্টার নামে পরিচিত পাথরঘাটাসহ কয়েকটি রুটের কাউন্টারের দায়িত্বে রয়েছেন জাহিদ।তিনি বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ভাঙ্গিয়ে কাউন্টারটি পরিচালনা করছেন।

তারও রয়েছে সাব লীজে নেয়া একটি বিআরটিসি বাস ।অপরদিকে বিআরটিসির নিজস্ব কর্মচারী ও কর্মকর্তা থাকার পরেও কিভাবে জাহিদকে কাউন্টারের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন ডিপোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।

এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার মোঃ জামশেদ আলী সরাসরি জড়িত বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি প্রতি সরকার নির্ধারিত রাজস্ব’র বাইরে ডিপো ম্যানেজার প্রতিটি ট্রিপ (আসা-যাওয়া) থেকে হাতিয়ে নেয় রুট ভেদে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এ কর্মকর্তা।

চালক ও সুপারভাইজার রুট গুলোতে ইচ্ছেমতো গাড়ি চালিয়ে বেতনের বাইরে বাড়তি আয় করার জন্য ম্যানেজার কে ট্রিপ প্রতি ঘুষ দেয় (চুঙ্গি, ঘুষ প্রদানের কোড যা ডিপোতে ব্যবহৃত হয়)।

মেরামত ও খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে রয়েছে অভিনব প্রতারণা। ব্যবহৃত পুরাতন টায়ারে রিসোলিং করে মাত্র দেড় হাজার টাকায়। তার বিপরীতে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ভাউচার দেখানো হয় নতুন টায়ারের দামে।

এতে বছরে কয়েক কোটি টাকা লস হয় বিআরটিসির। এ টায়ার দেখতে নতুনের মতো দেখালেও বড়জোর এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।এভাবে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে টায়ার কেনার নামে দূর্নীতির। এক দুই মাসের মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে থাকে বাস সমূহ।

এদিকে মেশিনারী যন্ত্রাংশ মেরামত করে নতুন কেনার ভাউচার করা হয়, এমনকি অচল ৩১ টি গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে স্বচ্ছল গাড়িতে ব্যবহার করে নতুন কেনার ভাউচার দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ লোপাট করে যাচ্ছে এ অসাধু কর্মকর্তা ।

সুষ্ঠ তদন্ত হলে সহজেই বেরিয়ে আসবে নিত্য চলা এ দূর্নীতির বাস্তবতা এমনই মনে করছেন বিআরটিসির একাধিক সূত্র।

অপরদিকে চালক ও সুপারভাইজার কর্তৃক চুঙ্গি দেয়ার কারন হিসেবে জানা যায়, তারা যেমন খুশি তেমন করে ট্রিপ দিতে কোন নিয়ম নীতি মানবে না।

পথে পথে যাত্রী তোলা, ও মালা উঠানো, গাড়ির বক্সে অতিরিক্ত ওজনের মালামাল পরিবহন সহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ।

এদিকে চুঙ্গি দিয়ে গাড়ি চালানো একাধিক চালক ও সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পেটের দায়ে গাড়ি চালাই, ট্রিপ প্রতি সেলামী দেয়া লাগবেই, তা না হলে ট্রিপ পাবো না। না খেয়ে থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে ম্যানেজার মোঃ জামশেদ আলীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য,বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপোর অধীনে ১৫ রুটে বাসচলাচল করে। ৭০টি নতুন ও পুরাতন বাসের মধ্য গড়ে রুটে চলছে ৪০টি বাস।

এরমধ্যে এসি ও নন এসি মিলিয়ে নতুন গাড়ির সংখ্যা মাত্র ২০টির মতো।৫টি দোতালা ও ১টি একতলা বাসের সাহায্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহন করেছে সংস্থাটি।

Exit mobile version