Site icon দৈনিক এই বাংলা

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গলার কাঁটা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড

কুতুবউদ্দিন হিরু ::

বেসরকারী ব্যাংক  স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড যেন কলার কাঁটা। এসব ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে  অস্বাভাবিক চার্জ ও অতিরঞ্জিত  ফি আদায় করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে নির্বাচনের মৌসুমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলে ‘ ট্রাম্প কার্ড ‘ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড। 

মানিকগঞ্জ -১ ( আসন ১৬৮) আসনে গণফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন জমা দেন মোহাম্মদ  শাহজাজান খান। কিন্তু রবিবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে জানানো হয় তার ‘ সিআইবি ( ক্রেডিট ইনফরমেশন)   ‘ সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিআইবি সম্পর্কে অনাপত্তিপত্র  জমা দেওয়ার জন্য। সোমবার দৌড়ঝাঁপ করে দেখতে পান ৬/৭ বছর আগে সম্পূর্ণ লেনদেন নিষ্পত্তি হওয়া স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডই (৪৫৫৪৪৫০০০০৬৭২৮৭২) তার মনোনয়ন পত্র বৈধ হবার প্রতিবন্ধকতা। 

সোমবার স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের উত্তরা শাখায় গিয়ে উপুর্যুপরি  হয়রানির শিকার হন তিনি। তাকে বলা হয় বকেয়া টাকা ৬১ হাজার টাকা জমা দিলেই ; সিআইবি সম্পর্কিত অনাপত্তিপত্র দেয়া সম্ভব। তা না হলে মনোনয়ন পত্র বৈধতার বিষয়ে কোন প্রকার সহযোগিতা ব্যাংক করবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে প্রার্থীদের ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত অনাদায়ী অর্থ সংগ্রহ করার ধুম লেগেছে। অনেক গ্রাহকই ৬/৭ বছর আগেই এসব ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু টাকার ( চার্জ) মিটার বন্ধ করেন নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।  বিষয়টিকে পুরোপুরি অন্যায় বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। 

শাহজাহান খান বলেন, গত ৬/৭ বছর ধরে ব্যাংক থেকে কোন প্রকার দাবিদাওয়া সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয় নি। ৯৫ হাজার টাকার বিপরীতে সুদসমেত  এক লাখ পঁচানব্বই হাজার জমা দিয়ে ব্যাংকের উত্তরা শাখাকে অবহিত করে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।  এত বছর পর এসে সেই প্রত্যাহার করা ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া দাবি করা অন্যায় শুধু নয় স্পষ্ট দুর্নীতি।  পরিস্থিতি এমন যে আমাকে আগামীকালকের ভেতরেই দাবি করা টাকা পরিশোধ করা ছাড়া মনোনয়নপত্র বৈধ করার কোন পথ খোলা নেই।  নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে সুরাহা করা উচিত বলে আমি মনে করি। ‘

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারাদেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া অনেকেরই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে এসব ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া বিলের কারণে। একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র এক্ষেত্রে অনাপত্তি পত্র দেবার ব্যবসা খুলে বসেছেন। সাধারণত ঋন খেলাপির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে। ঋন খেলাপিরা ব্যাংকের সাথে দেনদরবার করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক গ্রাহকই অব্যবহৃত  ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত তথ্য আপডেট রাখেন নি। গলার কাঁটা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এসব অব্যবহারিত ক্রেডিট কার্ড। শুধু তাই নয়  নির্বাচনের মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব অব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া।

এ বিষয়ে জানতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করা হলে কোন কর্মকর্তাই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দিনে দিনে অনাপত্তি পত্র সংগ্রহ করে দেবার জন্য ‘অনৈতিক ঘুষ’ দাবি করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা । ব্যাংকের দাবির পাশাপাশি ঘুষের টাকার যোগান দিতে বাধ্য হচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা। 

২০২০ সালের ১লা অক্টোবর থেকে  বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছিল ক্রেডিট কার্ডের সুদ অন্য ঋণের সুদের চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। ফলে ব্যাংকগুলো এর আগে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করতে পারলেও সেই রাস্তা বন্ধ হয়। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক বিভিন্নভাবে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ ও আদায় স্থগিত, জরিমানা ও বিলম্বে বিল পরিশোধে মাশুল আদায় বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিলো। এরপরও  গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত  সুদ আদায় বন্ধ হয়নি। আবার  বিলম্বে বিল পরিশোধে মাশুল আদায়ের অভিযোগও রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এর বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের  গ্রাহক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড লোভনীয় অপারে গ্রাহকদের ধরিয়ে দিয়ে আসলে গলা কাঁটছে। সবকটি ক্রেডিট কার্ড এর বিপরীতে  অতিরঞ্জিত মাশুল আদায় করছেন স্টান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক। ‘

অনেক গ্রাহক বলছেন, ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার উৎসাহ দিয়ে এনে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যাংকটি। বিদেশি এই ব্যাংকের বেশির ভাগ গ্রাহকের অভিযোগ, ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত হয়রানি করছে ব্যাংকটি।বিদেশি ব্যাংক হওয়ায় এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করার নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। নতুন করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার কৌশলকে বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

Exit mobile version