Site icon দৈনিক এই বাংলা

অবরোধে বিএনপির কৌশল

কুতুবউদ্দিন হিরু :::

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ডাকা অবরোধে দলটি নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা পর্যন্ত  সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সহিংসতা এড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা, মহানগর -উপজেলার নেতাকর্মীরা আত্নগোপন থাকলেও অবরোধ সফল করতে দলের ভিন্ন ইউনিটকে কাজে লাগাচ্ছে বিএনপি। 

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে। ২৭ শে অক্টোবরের মহাসমাবেশ পন্ড হওয়ার পর থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরপর থেকে দলটির সক্ষমতা অনুযায়ী বড় কোন মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যায় নি। 

সুত্রমতে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে শেষ ধাক্কা দিতে চায় বিএনপি৷ এবিষয়ে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে কাজ করছে দলের বিশেষ ইউনিট। আন্দোলন চাঙা রাখার কৌশল হিসেবে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে  ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। 

সুত্রমতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দুই দিন সময় বেঁধে দেবে বিএনপি।এরপরই হরতাল-অবরোধের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। ওই সময় আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে এসে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হবেন এবং আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে বিএনপি ।

সুত্রমতে, ঢাকা -চট্টগ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলনের কৌশল সাজানো হয়েছে। জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে পুরো বিষয়টি  সমন্বয় করছে বিএনপি এই বিশেষ ইউনিট। চলমান অবরোধ ও সরকার বিরোধী আন্দোলনের গতি কমাতে গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক তৎপরতা ফাঁকি দিয়ে  দলে সকল পর্যায়ের নেতাদের কাছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করেছে সেই ইউনিটটি। 

সারা দেশে ছাত্রদল, যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের  অধিকাংশই গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছাড়া হবার পরও অবরোধের সমর্থন ঝটিকা মিছিল, পিকেটিং করছে কারা – এমন গোলক ধাঁধায় গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের বিভিন্ন সুত্রমতে,  প্রশাসনের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে বের হওয়ার মতো দুষ্কর কাজ সমন্বয় করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিন্ন কোন ইউনিট। কারণ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, খুলনা জেলার  প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা  অনুযায়ী অভিযান চালানো হয়েছে। 

বিএনপি দপ্তরের তথ্যমতে, গত ১২ নভেম্বর  সারাদেশে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৬৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া  ২৮ অক্টোবর ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ দিনের মহানগরের ৬ থানায় ১৭টি মামলা করা হয়েছে। দুটি বাদে সব কটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি আছেন। এসব মামলায় এজাহারে নাম আছে ৩৮৬ জনের এবং বাকিরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে। এরই মধ্যে ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় গত ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে ৫০টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় রুজু হয়েছে ১৬টি মামলা এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৪০ জন নেতাকর্মীকে। এর বাইরে উত্তর চট্টগ্রামের থানাগুলোতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৯টি এবং গ্রেফতার হয়েছেন ২১০ জনেরও অধিক। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১৮০ জন নেতাকর্মী। একইভাবে , খুলনায় তিন মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।দুই মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত  ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

সুত্রমতে,  সারাদেশে বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ধরপাকড়ের বিবেচনায় রেখে নির্বাচন পর্যন্ত  দুই মাসের আন্দোলন প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। 

Exit mobile version