Site icon দৈনিক এই বাংলা

বিএনপি ভাঙ্গার আশায় গুড়ে বালি

বিশেষ প্রতিনিধি :::

আসন্ন জাতিসংঘ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ভাঙ্গার চাপ ভালো ভাবেই সামাল দিয়েছে দলটি। বিভিন্ন মহলে নির্বাচনের আগে বিএনপির বেশ কিছু নেতা নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত  তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন এমন গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভুঁইপোড় দলের কিছু নেতাকর্মী ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ঝুলিতে নাম পড়েনি পরিচিত কোন রাজনৈতিক নেতার। যদিও তৃণমূল বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার নতুন একাধিক দলকে মাঠে নামিয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। বিএনপির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে ভোটে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তৎপরতাও জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ।

যুক্তরাজ্য বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র মতে, দলটির ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলছুট নেতাদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার প্রলোভন কিংবা সুবিধা নিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে চাওয়া বিএনপি  নেতাদের স্থানীয় নেতাকর্মী দ্বারা শায়েস্তা করার নির্দেশনা দেয়া হয় এক সপ্তাহ আগে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে  সেই নির্দেশনা কাজে লেগেছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করার চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ। এমন পটভূমিতে  বুধবার নতুন নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি নতুন নেতা-কর্মীদের যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কারা কারা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হলেও কিছু নামসর্বস্ব ভুঁইফোড় দলের নেতা ও কর্মী ছাড়া কোন অর্জন নেই তৃণমূল বিএনপির।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের কেন্দ্রীয়, পদধারী, সুপরিচিত বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নতুন এ দলে যোগদান করেননি।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরীও যোগদানের তালিকা দেখে হতাশ।

বিএনপি ছেড়ে আসা একসময়কার ডাকসাইটে এই নতা  বলেন, ‘ ভবিষ্যতে তাকিয়ে দেখেন কী কী হয়, কারা কারা আসেন। ‘

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিতে মতবিরোধের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। মূলত নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল কীনা, তা নিয়ে দলের নেতৃত্বের মাঝে নানা ধরণের মত শোনা যায়। তবে চলমান সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে  নানা ধারায় বিভক্ত দলকে একই সুতোয় বাঁধতে সক্ষম হয়েছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, মহাসমাবেশ পন্ড করার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই জানতো। তারপরও সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের সহিংসতা এড়াতে বলা হয়েছে। মহাসমাবেশ পন্ড হবার কারণে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে নেতাদের অনেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে সরকারের সাথে যোগসাজশের অভিযোগ তুলছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সন্দেহ বা অবিশ্বাস এখন সরকার পতনের আন্দোলনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির জন্য। বিএনপি অবরোধ কর্মসূচির কার্যক্রমই থমকে গেছে বলা যায়। তবে বুধবার সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে সরকার পতনের সম্ভাবনা ও সামনের কর্মসূচি তারেক রহমানের  স্পষ্ট  বার্তা প্রধান পৌঁছানো হয়েছে। বলা হয়েছে,  বিএনপি ভাঙ্গার সব  চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

সুত্রমতে, শুধু তৃণমূল বিএনপি নয় জামাত নিয়ে সন্দেহ ছিলো বিএনপির। দীর্ঘ ১৭ বছরের সঙ্গ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে বিএনপির দুরত্ব কমিয়ে আনার কারণে ভেতরে ভেতরে নাখোশ জামাত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিল ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোট। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের আগেই বিরোধ সৃষ্টি হয় ইসলামী ঐক্যজোটের।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে থাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ সৃষ্টি হয় যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৯ সালে বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট গঠনের পর থেকেই আন্দোলন কর্মসূচীসহ যে কোন কর্মসূচী সফল করার ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করে বিএনপি। বিশেষ করে জোটগত যে কোন কর্মসূচী সফলের ব্যাপারে আর্থিক সাপোর্ট ও লোকবল সমাগমের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করে জামায়াত। এমনকি বিএনপির নিজস্ব কর্মসূচীতেও লোকবল সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে জামায়াত। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের পর বিএনপির অবস্থা যখন ছন্নছাড়া তখন বিএনপিকে রক্ষা করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দল জামায়াত। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াত রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচী পালন করতে থাকে। এ সময় জামায়াত তাদের কর্মসূচী সফল করতে বিএনপির সমর্থন চায়। কিন্তু বিএনপি জামায়াতের কর্মসূচীতে মৌন সমর্থন দিলেও সরাসরি কোন কর্মসূচীতে অংশ নেয়নি। এ কারণে ভেতরে ভেতরে বিএনপির প্রতি জামায়াতের ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

এছাড়া ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ জোটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপিকে অনেক জায়গায় জামায়াত ছাড় দিলেও মাত্র কয়েকটি ছাড়া সব জায়গায় জামায়াতের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেয় বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সারাদেশের ২৩৪ পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই জোটগতভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে জামায়াত ৪৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী দিলেও ১০টির বেশি পৌরসভায় বিএনপি তাদের ছাড় দেয়নি। আর যে পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি সে পৌরসভায়ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে জামায়াত মাত্র ১টির বেশি পৌরসভায় মেয়র পদে বিজয়ী হতে পারেনি। এতে বিএনপির প্রতি চরম ক্ষুব্ধ হয় জামায়াত।

Exit mobile version