Site icon দৈনিক এই বাংলা

ওসি খাইরুল আসামী, মামলা নিলো না কোতোয়ালি থানা

নাদিরা শিমু :::

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় তার ছেলে আসিফ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় এজাহার জমা দিলেও, মামলা নেয় নি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২রা নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রয়াত শহিদুল্লাহ’র ছেলে আসিফ শহীদ এজাহার নিয়ে থানায় যান। তবে কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে এই এজাহার গ্রহণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে আসিফ শহীদ জানান, আদালত ইতিমধ্যে আমার বাবার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী, চান্দগাঁও  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ইসলামসহ নয় জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দন্ডবিধির ৪২০/২০১/২১৭/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/১৬৬ / ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি দমন আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আমলে নেবার জন্য এজাহার দাখিল করেছি। তবে পুলিশ মামলার এজাহার গ্রহন করে নি।  ‘

চান্দগাঁও থানায় গ্রেপ্তার হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ মারা যান। শহীদুল্লাহকে পুলিশ হেফাজতে হত্যার অভিযোগ এনে এরআগে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী। মামলাটিতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও দুই সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চান্দগাঁও থানা এফআইআর রুজু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে শহীদুল্লাহ মারা গেছেন সেটিও ইতিমধ্যে  প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওইদিন মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রতিপক্ষকে হয়রানির অভিযোগে আলোচিত বাদী রনি আক্তার তানিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম। চট্টগ্রামের আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাকি ৩ আসামি হলেন- এস. এম. আসাদুজ্জামান, মো. জসিম ও মো. লিটন।

এদিকে, বৃহস্প্রতিবার চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মো. খাইরুল ইসলামকে বদলি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।  পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের সই করা আদেশে তাকে গোয়েন্দা পুলিশে বদলি করা হয়। একই আদেশে পরিদর্শক পদমর্যাদার আরও ৬ জনকে বদলি করা হয়।

জানা গেছে, শহীদুল্লাহ দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত গত ২৯ আগস্ট দুদকের সাবেক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে বিচারক ওইদিনই অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আসামিরা আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন পাননি। এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী হাজির না হওয়ায় তার আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন। কিন্তু ওইদিনই আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

অভিযোগ ওঠে, থানায় নেওয়ার পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা কয়েকজন অসাধু লোকের যোগসাজশে ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহকে নির্যাতন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীকে পরিবারের লোকজন ওষুধ দিতে চাইলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলো পৌঁছাতে দেয়নি। একপর্যায়ে কয়েকঘণ্টার মধ্যে শহীদুল্লাহ মারা যান।

Exit mobile version